ঢাকা | সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘৫ ম্যাচ খেলার কথা মিথ্যা, নিচে ব্যাট কর‍তে বলা হয়েছিল’

নট আউট ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৪০

তামিম ইকবাল। ছবি: ফেসবুক তামিম ইকবাল। ছবি: ফেসবুক

নট আউট ডেস্কঃ বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ঘোষিত দলে জায়গা হয়নি ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালের। এরপর থেকেই সমালোচনার ঝড় বয়ে যান দেশের ক্রিকেটের উপর। অনেকেই বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি।

এদিকে বিশ্বকাপ খেলতে আজ (বুধবার) বিকেলে ভারতের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশ দল। পূর্বঘোষিত অনুযায়ী বাংলাদেশ দল দেশ ছাড়ার পরই, বিশ্বকাপে না খেলার বিষয়টি নিজের ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় সবকিছু খোলাসা করেন তামিম।

বাংলাদেশের দল ঘোষণার দিন দুয়েক আগে বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলবেন এমন শর্ত দেন তামিম। এমনই এক গুঞ্জন উঠেছিল। তবে সেটিকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তামিম। তিনি বলেন, 'আমি কোনো সময়, কাউকেই বলিনি আমি পাচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারবো না। এই কথাটা কোথাও হয়নি। আমি নিশ্চিত এ কথাটা নান্নু ভাইও গতকাল পরিষ্কার করেছে। এই মিথ্যা, ভুল কথাটা আমি জানি না কীভাবে মিডিয়াকে খাওয়ানো হয়েছে। বা কে করেছে? কিন্তু এ জিনিসটা সত্যি ভুল।’

 

তামিম ইকবাল তার ফেসবুক বার্তায় ভিডিও যা বলেছেন, তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

 

আসসালামু আলাইকুম। আপনার স্ট্যাটাস দেখে বুঝতেই পারছেন, গত দুই তিনদিনে যা হচ্ছে, যা মিডিয়াতে লেখা হয়েছে; পুরোপুরি ভিন্ন। যে জিনিসটা ঘটেছে, আমি আপনাদের স্টেপ বাই স্টেপ জানাই। আমার মনে হয় সবার এটা জানা উচিত।

আপনারা সবাই জানেন, আমি অবসর নিয়েছিলাম। সেটারও একটা কারণ ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফেরত আসি।

তারপর আমি দুই মাস অসম্ভব পরিশ্রম করি। ফিজিও যারা আছেন, তারাও জানেন আমি কতটা পরিশ্রম করেছি মাঠে ফেরার জন্য।

আমি হয়তো মাত্র ৪৪ রান করেছি। তবে ওই মুহূর্তে আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল ব্যাটিংটা কেমন করি সেটা দেখা। আমার মনে হয় আমি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি বড় করতে চেয়েছিলাম ইনিংসটা, সেটা হয়তো হয়নি।

ওই ম্যাচের পর আমি মানসিকভাবে খুব খুশি ছিলাম। গত চার-পাঁচ মাস যা হয়েছে, আমার মাথায় ওতটা ছিল না। আমি আবার খেলার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

ইনজুরি থেকে ফেরার পর ব্যথা থাকবেই। আমিও প্রথম ম্যাচে একটু ব্যথা ফিল করেছি। তবে যখন খেলা শেষ হলো, আমি আমার অবস্থাটা বললাম ফিজিওকে। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনজন সিলেক্টর ড্রেসিংরুমে আসেন।

একটা জিনিস ক্লিয়ার করতে চাই, আমি কখনো বলিনি পাঁচটার বেশি ম্যাচ খেলতে পারবো না। এই কথাটা আমি কখনো বলিনি। এটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা। আমি জানি না এই কথাটা কীভাবে মিডিয়ায় এসেছে, কে ছড়িয়েছে। এটা পুরোপুরি ভুয়া কথা।

আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম, দেখেন আমার বডিটা এরকমই থাকবে এখন যে অবস্থা। একটু ব্যথা থাকবে। আপনারা যখন দল নির্বাচন করবেন এটা মাথায় রেখেই দল নির্বাচন কইরেন।

এটা বলারও একটা কারণ আছে। কিছুদিন আগে আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, আমি যে ম্যাচ খেলার পর অবসর নেই। ওখানে আমার ইনজুরি নিয়ে একটা কনসার্ন ছিল। যখন আমি নিজের ইনজুরি নিয়ে বলি, সেখানে তিনজন সম্মত ছিল যে ম্যাচটা আমি খেলতে পারি।

তারপর আপনারা জানেন যে কেমন কেমন ধরনের কথা মিডিয়ায় বলা হয়েছে যে, ফিট না থাকলে খেলার দরকার কী। আমার কাছে খুব অবাক লাগছে তখন কারণ ওই সময় রুমে সবাই আমার সম্মতি দিয়েছিল।

এজন্য আমি আবার বিতর্ক তৈরি করতে চাইনি। আমার পক্ষ থেকে আমি পরিপূর্ণ সততার সঙ্গে একটা ক্লিয়ার করেছি। কারণ আমি যদি বিশ্বকাপে যাই, এমনও হতে পারে আমি ৯ ম্যাচ খেললাম কোনো সমস্যা ছাড়া। বিশ্বকাপের ফিকশ্চারটাই এমন ছিল যে, প্রতিটা ম্যাচের পর গ্যাপ আছে প্রথম দুই ম্যাচ ছাড়া।

আবার এমনও হতে পারে, এটা ফিট মানুষের সঙ্গেও হতে পারে, দুটো ম্যাচ খেলার পর ইনজুরি হয়ে গেলো। তাকে দেশে পাঠিয়ে দিলো, তার রিপ্লেসমেন্ট গেলো। এজন্য আমি নির্বাচকদের এটা ক্লিয়ারলি বলি।

ফিজিওর রিপোর্টে পরিষ্কার যে কথাটা ছিল, আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। কেউ চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে আমি রাজি আছি। সেখানে বলা হয়েছে, প্রথম ম্যাচের পর এমন পেইন হয়েছে, পরের ম্যাচের পর এমন পেইন হয়েছে।

মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্ট মনে করে। ১-২ তারিখে প্রস্তুতি ম্যাচ। আমি যদি এখন রেস্ট নেই, পরে যদি দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলি। তাহলে আমি একটু সময় পাবো। দুই সপ্তাহের পুনর্বাসন হয়ে যাবে। তাহলে আমি প্রথম ম্যাচটা খেলতে পারবো। কোনো জায়গায় বলা হয়নি, পাঁচ ম্যাচ বা দুই ম্যাচ খেলবো বা খেলতে পারবো না। তবে আমার বডিতে পেইন ছিল, এটা সত্য কথা।

মিডিয়াতে যে কথা হচ্ছে, পাঁচ ম্যাচ বা বেশি কম। আমার মনে হয় না, আমি বিশ্বকাপে না যাওয়ার পেছনে এটার বড় অবদান ছিল। আমার ব্যথা থাকতে পারে, আমি তো ইনজুরড হইনি এখনো।

এক-দুদিন পর বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করলেন, তিনি আমাদের ক্রিকেটের সঙ্গে বেশ ইনভলবড। তিনি আমাকে ফোন করে বললেন, তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। তাহলে তুমি আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেইলো না।

আমি বললাম- এটা তো ১২-১৩ দিন পরের কথা। আমি ১২-১৩ দিন পর ভালো কন্ডিশনে থাকবো, তবে কী কারণে খেলবো না। পরে আমাকে বললো, যদি তুমি খেলো তাহলে আমাদের প্ল্যান হলো নিচের দিকে ব্যাটিং করতে হবে।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমি কোন মাইন্ডসেট থেকে আসছিলাম। হঠাৎ করে একটা ভালো ইনিংস খেললাম। আমি হ্যাপি ছিলাম। এর মধ্যে আবার এসব কথা, আমার পক্ষে নেওয়া আসলে সম্ভব না। আমি ১৭ বছর পর এক পজিশনে ব্যাটিং করছি, আমি কোনোদিন ৩-৪ নম্বরে ব্যাটিংই করিনি। এমন যদি হতো, আগেও করেছি, তাহলে একটা কথা ছিল।

স্বাভাবিকভাবেই আমি কথাটা ভালোভাবে নেইনি। আমি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ এই বিষয়টি আমি পছন্দ করিনি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমাকে জোর করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। ইচ্ছে করে করে। এটা ঠিক হলো, আরেকটা নতুন জিনিস দেওয়া হলো। আমার তাই মনে হয়েছে।

তখন আমি বললাম, যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে, তবে আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন এক একটা নতুন জিনিস আমাকে ফেস করাবেন, আমি এসবে থাকতে চাই না। তারপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে আমার আরও কথা হয়। মনে হয় আমার এটা এই প্ল্যাটফর্মে বলা উচিত না। আমি স্ট্রংলি বলছি, তাহলে আমাকে রাইখেন না।

আমাদের একটা অভ্যাস আছে, একটা বড় জিনিস ঢাকার জন্য আরেকটা সামনে নিয়ে আসা যে, সে পাঁচ ম্যাচ খেলবে। আমার মনে হয়, যদি আপনি আমাকে চান, তবে আমাকে মেন্টালি ফ্রি এবং হ্যাপি রাখা উচিত। আমার জন্য গত তিন-চার মাস অনেক কঠিন ছিল। এর মধ্যে এসব নতুন নতুন জিনিস বলা।

আমি এটাও বলি, এই কথাটাই যদি আমাকে অন্যভাবে বলা হতো, হয়তো আমি মেনে নিতাম। কিন্তু হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া ফোন করে যদি বলে আপনি খেইলেন না, অথবা যদি খেলেনও, আমাদের এমন আলোচনা হচ্ছে আপনি নিচে ব্যাট করবেন। আসলে এটাই হয়েছে।

আমার মনে হয় এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। আমি মনে করি, আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, আমি শেয়ার করলাম। তবে দিনশেষে যারা বাংলাদেশের হয়ে যে ১৫ জন খেলতে গেছে, তাদের জন্য শুভকামনা। আশা করি তারা বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে।

সাথে আরও অনেক কিছুই ঘটেছে। আমি নিশ্চিত আপনারা দেখছেন। একটা ঘটনা ইনসিডেন্ট হতে পারে, দুইটা কাহিনী মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে পারে। কিন্তু একজনের সঙ্গে গত তিন-চার মাসে যদি সাত-আটটা কাহিনী হয়, তবে সেটা ইচ্ছাকৃত। আমার জন্য দোয়া করবেন আর সবার কাছে অনুরোধ আমাকে মনে রাখবেন। ভুলে যাইয়েন না।

 

-নট আউট/টিএ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

প্রথম ওয়ানডেতে হোঁচট খেল বিসিবি একাদশ

ভারতের এমএ চিরাম্বরম স্টেডিয়ামে সোমবার প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছিল তামিলনাড়ু ক্রিক...

ভারত সিরিজের দল ঘোষণা বাংলাদেশের

জিম্বাবুয়ে সফরের দল থেকে বাদ পড়েছেন মোসাদ্দেক সৈকত, শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম।

জয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ

৭৪ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানের টার্গেটেই কঠিন বানিয়ে ফেলে ভারত।