ঢাকা | বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহযুদ্ধ, ব্যবসা অতপর কিউরেটর গামিনি!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ২ জুন ২০২২ ২০:৪৮

বিসিবির প্রধান পিচ কিউরেটর৷ ছবি সংগৃহীত বিসিবির প্রধান পিচ কিউরেটর৷ ছবি সংগৃহীত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট: বাংলাদেশে এক যুগের বেশি সময় ধরে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন গামিনি ডি সিলভা৷ শ্রীলঙ্কান এই নাগরিক বাংলাদেশের ক্রিকেটে বেশ আলোচিত চরিত্র। তার কাজ যেমনই হোক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বিসিবিতে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।

তার কাজের তথা তার বানানো জঘন্য পিচের সমালোচনা করে জরিমানা গুণতে হয়েছিল বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালকে।

তার হাতে নিগৃহীত ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের অগুণতি ক্রিকেটার। সেটাও হোম অব ক্রিকেটে অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে গিয়ে।

সার্বিক ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করে বিসিবিতে বেশ ‘জামাই’ আদরে লালিত হন গামিনি। ক্ষমতার সুউচ্চ কোনো দপ্তরে নিশ্চয়ই এই লঙ্কানের বেজায় খাতির রয়েছে। তাই তো বিসিবির পরিচালকরাও এই কিউরেটরের ব্যর্থতার ভার নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেন।

যেমনটা শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনামই সাংবাদিকদের সামনে গামিনির হয়ে লড়েন, তার কাজের পুরো দায় নিজের উপর নিলেন।

বিসিবিতে গামিনির জামাই আদরে ভাটার টান পড়বে কবে, সেটা জানা যায়নি। তবে এই লঙ্কানের জীবনে বৈচিত্র্যময় গল্প রয়েছে। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী কেন, অনেকেরই অজানা।

গামিনির জীবনের গভীরে চোখ রাখলে জানা যাবে একজন সংগ্রামী, সাহসী ও জীবনে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সৌভাগ্যবানের গল্প৷

প্রকৃতির নিয়মে জীবনে বেশ কয়েকটি পেশায় হাত পাকালেও গামিনির প্রথম পছন্দ ছিল পিচ কিউরেটর হওয়া৷ তিনি স্বপ্ন পূরণ করেছেন নিজ মেধায়৷ কাটিয়েছেন কঠোর সংগ্রামের অধ্যায়। গল্পের আড্ডায় গামিনি তুলে ধরেছিলেন নিজের জীবনে বেশ কিছু ঘটনা৷ তার জীবনের অজানা অংশটুকুই আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

শ্রীলঙ্কান নাগরিক গামিনির জন্ম ১৯৬০ সালের ১৯ ডিসেম্বর৷ ২২ বছর বয়সে যোগ দেন নিজ দেশের পুলিশ বাহিনীতে৷ সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট হয়ে কাজ করেন ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত৷ ১৪ বছরের সরকারি চাকরি জীবনে তিনি টিকে থাকার লড়াই করেছেন, জানলে অবাক হবেন এই লড়াইটা ছিল যুদ্ধের ময়দানে৷ সাহসিকতার জন্য পেয়েছিলেন বিশেষ পুরস্কার৷

১৯৮৩ সালে শ্রীলংকায় শুরু হয় গৃহযুদ্ধ৷ এই গৃহযুদ্ধে মাঠে থেকে সম্মুখ যোদ্ধা হয়ে কাজ করতে হয়েছিল বাংলাদেশের প্রধান পিচ কিউরেটরকে৷

গৃহযুদ্ধের মর্মান্তিক সব ঘটনার স্মৃতিচারণ করে গামিনি বলেছিলেন, ‘আমার যুদ্ধ অভিযান ছিল জাফনা এবং ত্রিনকোমালিতে৷ যুদ্ধকালীন সময়ে আমি লাশের স্তুপ দেখেছি, খুব কাছ থেকে উপল্বদ্ধি করেছিলাম মৃত্যুর যন্ত্রণা৷ বোমার আঘাতে সহকর্মী ও সাধারণ মানুষের বিচ্ছিন্ন শরীর দেখতে হবে এমনটি কল্পনাতেও ছিল না৷ তবে এমন দৃশ্য আমাকে দেখতে হয়েছে৷ যা ছিল নির্মম বাস্তবতা৷ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অনেক ভয়ানক৷ পরের দিন বেঁচে থাকবো কি না এটি ছিল অনিশ্চিত৷ আমি সৌভাগ্যবানদের একজন কারন আমি বেঁচে ফিরেছিলাম৷ ’

সরকারি চাকরি ছেড়ে গামিনি শুরু করেছিলেন ব্যবসা৷ এমন সিদ্ধান্তের কারন সম্পর্কে তিনি বলেন, গৃহযুদ্ধের সময় যুদ্ধের ময়দানে কাজ করা অনেক কঠিন ছিল৷ আমাদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকলেও যে কোন সময় হামলায় নিহত হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল৷ যুদ্ধে মানব বোমা ব্যবহৃত হতো৷ যা ছিল সর্বোচ্চ ঝুঁকির৷ কখন আপনার উপর হামলা হবে, বলা যাচ্ছিল না। যে কোনো সময়, যে কোনো দিক থেকে হামলা হতে পারে। তার জন্যই সবসময় আতঙ্কে থাকতে হতো।
চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করলেও ক্রিকেটের প্রতি একটা আলাদা টান ছিল৷ এই খেলার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করার কারনে কৃষি ডিপ্লোমা শেষে আম্পায়ারিংয়ের কোর্স সম্পূর্ণ করেন বলে জানান গামিনি৷

ক্রিকেট ভালোবাসতেন, ক্রিকেট খেলতেন৷ নিজের খেলা প্রসঙ্গে গামিনি বলেন ; “আমি নিজ দেশের হয়ে ট্রায়াল ম্যাচ খেললেও কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাইনি৷ আমি এটাকে কখনো আমার দূর্বলতা মনে করি না৷ আমার ইচ্ছে ছিল ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকা৷"

কোর্স সম্পন্ন করে একজন যোগ্য আম্পায়ার হলেও কিউরেটর হওয়ার স্বপ্নের পেছনে এক মজার ঘটনা রয়েছে৷ গামিনির ভাষ্যমতে, পিচ কিউরেটর হওয়ার ইচ্ছা তৈরী হয়েছিল কৃষি বিজ্ঞানের কল্যাণে৷ বলা যায় কৃষি ডিপ্লোমা করাকালীন সময়ে৷ এরপরে ইংল্যান্ডে যাই৷ সেখানে কিউরেটরশিপে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল৷ পরীক্ষায় পাশ করার পর নিজেকে একজন কিউরেটর হিসেবে পরিচয় দিতে পেরেছিলাম৷

নিজ জীবনে লড়াই, সংগ্রামের ক্রিকেটে নিজ স্বপ্ন পূরণ করেছেন, কিন্তু নিজ দেশে কাজ করার সুযোগ হয়নি তার। পড়ে আছেন বাংলাদেশে। স্বদেশে কাজ না করার বিষয়ে গামিনি বলেন, ক্রিকেটেও লড়াই আছে, সংগ্রাম করতে হয়৷ তবে যুদ্ধে পরের দিনে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হতো, ক্রিকেটে ভালো কিছু করা সংগ্রাম৷ এছাড়াও ইচ্ছে ছিল অন্য দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করবো৷ আমি আমার কাজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ভালে করার৷ যদি দেশে ফিরতে হয় আবার ব্যবসায় যোগ দিবেন বলে মুচকি হাসিতে উত্তর দেন তিনি।

বর্ণাঢ্য জীবনে বিসিবির কিউরেটর পদে এত বছর থাকাটাও বড় অর্জন গামিনির। পরিস্থিতি বলছে, বিসিবির সঙ্গে তার এ অধ্যায়ের বিচ্ছেদ সহসা হচ্ছে না। কারণ এ প্রেমের মূল উদ্দেশ্য, কারণ সবই তো দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে এত বছর যাবৎ এক নিগুঢ় রহস্য হয়ে আছে।

 

-নট আউট/এমজেএ/এমআরএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

তিন পান্ডবের পাঁচ সেঞ্চুরি, ইমপ্যাক্টে এগিয়ে.....

বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলা সাকিবের রান ১১৪৬৷ ২৯ ম্যাচে মুশফিকের ৮৭৭ রান৷ এই রান নিয়ে রয়ে...

৬, ৬, ৬, ৬, ৬—‘রিংকু সিং’ হ্যাভ ডান ইট!

শেষ ওভারে এমন খুনে ব্যাটিং এর আগে কেউ দেখেনি বোধহয়।

তাকে সময় দিন, যেন সে হারিয়ে না যায়

‘২০১৬ সালে রিজওয়ানের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেসময়ে যেহেতু তার বয়স কম ছিল, দু...