ঢাকা | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অভিজ্ঞতায় ট্রফি আসে, স্টোকস-ওয়েড হতে পারবেন রিয়াদ?

মশিউর রহমান শাওন
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৩ ১৬:৩৮

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

মশিউর রহমান শাওনঃ ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ভারত-পাকিস্তান লড়াই৷ বাম-হাতের গতির ঝড়ে রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলকে পরাস্ত করেছিলেন শাহিন আফ্রিদি৷ নিশ্চিতভাবে সেই ডেলিভারি দুইটি লেগে আছে কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর চোখে৷

২১ বছরের অনভিজ্ঞ আফ্রিদি ছিলেন অধিনায়কের আস্থা, আর পুরো পাকিস্তানের বিশ্বাস৷তবে সেমিফাইনালের স্নায়ুচাপে আফ্রিদি হেরেছিলেন অভিজ্ঞ ম্যাথু ওয়েড'র কাছে৷

অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য ১২ বলে ২২ রানের সমীকরণ সেদিন আফ্রিদির ৬ বলেই পূরণ করেছিলেন ওয়েড৷ নিজ দেশে দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে৷ দলও শেষ পর্যন্ত হয়েছে ট্রফির মালিক৷ অথচ ম্যাচটির আগে দীর্ঘসময় অফ-ফর্মে ছিলেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার৷

২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল৷ ট্রেন্ট বোল্টের শেষ বলটি ছিল লো-ফুলটস। স্ট্রাইকে থাকা স্টোকস চাইলেই হয়ত করতে পারতেন সীমানা ছাড়া। তবে ১ বলে ২ রানের হিসেব পূরণে আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করলে ঘটতে পারতো অনেককিছুই। তাই ঠান্ডা মাথায় ডিপ লং অঞ্চলে বল পাঠিয়ে ড্র নিশ্চিত করেই ছুটেছিলেন দুই রান নিতে। অন্য প্রান্তের ব্যাটার রান আউট হওয়ায় ম্যাচ গড়িয়েছিল সুপার ওভারে। স্টোকসের জায়গায় তরুণ কোন ব্যাটার থাকলে নিশ্চয়ই ছয় দিয়ে শেষ করতেন চাইতেন ম্যাচটি।

ক্রিকেট যদি হয় যুদ্ধের ময়দান, তবে এই ময়দানে আপনাকে অভিজ্ঞতার দাম দিতেই হবে৷ ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে সাকিব-রিয়াদের অভিজ্ঞতায় কার্ডিফে বাংলাদেশের মহাকাব্য৷ গ্যালারীতে উপস্থিত সমর্থকদের উচ্ছ্বাস৷ প্রায় আট হাজার মাইল দূরে অবস্থিত এই দেশে ইদ আনন্দ৷

কার্ডিফে সেদিন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করেছিলেন ১০২ রান৷ প্রায় ১৬ বছর আর ২১৮ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শতক করেছেন মোটে ৩টা৷ সাইলেন্ট কিলারের বাকি দুইটা শতকের গল্প বিশ্বকাপ আসরে৷

৯ মার্চ ২০১৫,অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলেছিলেন ১০৩ রানের ইনিংস ৷ স্ট্রুয়ার্ট ব্রডের বল পয়েন্ট অঞ্চলে পাঠিয়ে স্ট্রাইক বদল করেই একহাতে ব্যাট আর একহাতে হেলমেট নিয়ে উদ্‌যাপন করলেন রিয়াদ৷ রিয়াদের আগে কোন বাংলাদেশি ওয়ানডে বিশ্বকাপ মঞ্চে করতে পারেনি এমন উদ্‌যাপন৷

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতক,পরের ম্যাচেও ওয়ান ম্যান আর্মি ৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেললেন ১২৮ রানের ইনিংস৷ রিয়াদের ইনিংস আর উদ্‌যাপন,সে তো জাতির কাছেই স্মরণীয়৷

৩ বিশ্বকাপে ১৭ ম্যাচ৷ ৫১.৩৩ গড় আর প্রায় ৮২ স্ট্রাইকরেটে রান ৬১৬৷ লাল-সবুজ জার্সিতে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা মুশফিক-তামিমের ম্যাচ সংখ্যা সমান ২৯টি ৷ দুই সতীর্থের সাথে রিয়াদের রানের ব্যবধান ৩৬১ ও ১০২৷ নাম্বার ওয়ানে থাকা সাকিবের সাথে রানের ব্যবধান চওড়া হলেও গড়ের বিচারে বিশ্বসেরার চাইতেও এগিয়ে রয়েছেন রিয়াদ৷

রিয়াদের এমন সব পারফরম্যান্স অবশ্য উপরে ব্যাটিং করেই। চার-পাঁচ নাম্বারে ব্যাট করে সফল রিয়াদ দলের প্রয়োজনে জায়গা নিয়েছেন সাত নাম্বারে। রিয়াদকে নিয়ে তাইতো দেশসেরা অধিনায়ক মাশরাফি একবার বলেছেন,‘আজকে ওর নামের পাশেও ৭-৮ হাজার রান থাকতে পারত। কিন্তু ওকে দলের জন্য খেলতে হয়েছে। খুব কঠিন কাজ করতে হয় ওকে। ওর কাজটা এমন, সব দিন সফল হবে না। সফল না হলে দর্শক, মিডিয়া, সব জায়গায় সমালোচনা শুনতে হয় ওকে। তার পরও করে যাচ্ছে। সে সিনিয়র ক্রিকেটার, তবু একদিনও এসে কিন্তু বলেনি যে চারে ব্যাট করতে চাই। বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে আসছে সে।’

ভারত বিশ্বকাপ চলাকালীন রিয়াদের বয়স ছাড়াবে সাড়ে আটত্রিশ৷ যদিও আটত্রিশের শুরুতে বিশ্রাম বেড়াজালে তিনি৷ ভাগ্য খুব একটা ভালো না হলে মিস করবেন বিশ্বকাপ বিমান৷ দলের প্রয়োজনে জায়গা ছাড়তে ছাড়তে রিয়াদ এখন দলের বাইরে৷ তবে অধিনায়ক তামিম জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ পরিকল্পনার অংশ রিয়াদ৷ বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনও বিশ্বাস করেন থাকবেন রিয়াদ৷

অধিনায়ক ও বিসিবি বস্ বললেও সাত নাম্বার পজিশনের জন্য লড়ছেন বেশকয়েকজন৷ তবে অভিজ্ঞতার বিচারে দলে থাকতে পারেন রিয়াদ৷ তবে দেখার বিষয় মাস্টারমাইন্ড হাথুরুর পরিকল্পনায় কতটা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন রিয়াদ৷

ক্রিকেটে শুরু থেকে শেষ, প্রতিটি পজিশন গুরুত্বপূর্ণ৷ মহাগুরুত্বপূ্র্ণ নাম্বার সাতে ব্যাট করা ব্যাটার৷ কেননা এখানে ব্যাট করা ব্যাটারকে কোনোদিন সামাল দিতে হবে দলের বিপর্যয়, কোনোদিন আবার বাকিদের করে যাওয়া কাজে পরিপূর্ণতা দান৷ এক পজিশনে দায়িত্বের রং বদলাবে চোখের পলকেই৷

বিশ্বকাপের আগে আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পক্ষে নন অধিনায়ক তামিম৷ আফগানিস্তান সিরিজ দিয়েই তাই ফিরতে পারেন রিয়াদ৷ বিশ্বকাপের মত মঞ্চে সামগ্রিক চাপ কাটিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য হলেও প্রয়োজন রিয়াদের৷ কেননা ঘরোয়া লিগ কিংবা দ্বিপক্ষীয় সিরিজের চাপ আর বিশ্বমঞ্চের চাপ নিশ্চয়ই এক নয়৷

বিশ্বকাপ দলে নাম্বার সাতের জন্য যে কয়েকজন আলোচনায় তাদের একজন আফিফ হোসেন। সামর্থ্য কিংবা সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় নেই৷ তবে ঘরোয়া লিগে সফল হয়েছেন উপরে ব্যাট করে, জাতীয় দলে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন দলীয় দশ ওভারের আগে ব্যাট করতে নেমে৷

২৫ ওয়ানডেতে ৫৪২ রান করা আফিফের ইনিংস সর্বোচ্চ ৯৩ রান৷ ২০২২ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ইনিংস খেলার দিনে আফিফ যখন ব্যাটিং করতে নেমেছিল তখন শেষ হয়নি শুরুর পাওয়ার-প্লে৷ এছাড়াও ঢাকা ডিভিশন প্রিমিয়ার লিগের অঘোষিত ফাইনালে করেছে ৫৩ বলে ৬০ রান৷ যখন মাঠ ছেড়েছেন আফিফ, ততক্ষণে তার দল আবাহনী শুরু করেছে চ্যাম্পিয়ন উদ্‌যাপন৷ এমন ইনিংসের দিনে আফিফ ব্যাট করতে নেমেছিল নাম্বার ফাইভে৷

জাতীয় দলে অধিকাংশ সময় নিচেই ব্যাটিং করেছেন আফিফ৷ তবে সুবিধা করতে পারেনি বড় দলগুলোর বিপক্ষে৷ এই যেমন দল থেকে বাদ পড়ার আগের দুই সিরিজে করেছেন মাত্র ৬১ রান৷ যেখানে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ১৪ আর সমান সংখ্যক ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭৷ উপরে ব্যাট করে যে ব্যাটার সফল, তাকে ফিনিশার বানানোর কাজ বিশ্বমঞ্চে নিশ্চয়ই করবেন না চন্ডিকা হাথুরুসিংহে৷

সাত নাম্বার পজিশনে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকেও রাখছেন কেউ কেউ৷ সদ্য সমাপ্ত ডিপিএল শেষে মোসাদ্দেক নিজেও এমন দাবি করতে পারেন। কেননা ডিপিএলে প্রায় ৯০ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ৩৯৫ রান৷ জাতীয় দলে শেষ দিকের দায়িত্বপালনে অবশ্য সফল বলা চলে এই ব্যাটারকে ৷২০১৯ বিশ্বকাপে ১০৬ স্ট্রাইকরেট আর ২০ গড়ে রান ১১৭৷ মঝার ছলে বলা যেতে পারে, মধুর লড়াইয়ে রিয়াদের বড় প্রতিপক্ষই বটে৷

রিয়াদ, মোসাদ্দেক, আফিফ তিনজনেই জাতীয় দলের বাইরে৷ সাত নাম্বার পজিশনের ভাবনায় রয়েছেন দলের নিয়মিত সদস্য ইয়াসির রাব্বি৷ ভবিষ্যতে শান্ত'র মত রাব্বিও জ্বলে উঠবেন। ম্যাচ জেতাবেন বাংলাদেশকে৷ তবে আসন্ন বিশ্বকাপ দলে এই ব্যাটারের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই৷ কেননা এখনও চোখে আটকে যাওয়ার মত কিছুই করতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটার।

ডিপিএলে ১৬ ম্যাচে ৫১১ রান৷ ৪৬ গড় আর ৯৫ স্ট্রাইকরেট৷ আসরে অর্ধশতক সংখ্যা ৫৷ এমন পারফরম্যান্সের পর নুরুল হাসান সোহানের নাম আসছে আলোচনায়৷ ব্যাটিংয়ে দলকে নিতে পারেন ভালো অবস্থানে৷ পাশাপাশি তর্ক সাপেক্ষে ঘরোয়া লিগে দেশ সেরা উইকেট রক্ষক৷ তবে জাতীয় দলে খেল হারিয়েছেন তিনি৷ লিটন-মুশফিকের উপস্থিতিতে উইকেট রক্ষক কোটায় সহসাই সুযোগ হচ্ছেনা এই ব্যাটারের৷ ফলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে ভারত মিশনে সোহানের জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

বাংলাদেশ টপিকে প্রথমে আফ্রিদি-ওয়েড, বোল্ট-স্টোকস গল্প বলার মূল কারণ 'অভিজ্ঞতার' মূল্য৷ টানা রান করতে না পারা ওয়েডকে দলে রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া শিবির৷ খারাপ সময়ে থাকলেও যে কোন সময় যে কোন কিছু করতে পারেন এই ব্যাটার, এমন বিশ্বাস হয়ত করেছিল বাকিরা৷ বিশ্বাসের মূল্য ওয়েড'র চাইতে আর ভালোভাবে কতজন দিতে পেরেছে তা নিয়ে একটা সমীক্ষা হতেই পারে৷ আসন্ন বিশ্বকাপে স্নায়ু চাপ সামলানো, রোমাঞ্চকর ম্যাচে নিজেকে শান্ত রেখে ম্যাচ বের করার জন্য হলেও রিয়াদই হতে পারেন বেটার চয়েজ৷

 

-নট আউট/এমআরএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

তিন পান্ডবের পাঁচ সেঞ্চুরি, ইমপ্যাক্টে এগিয়ে.....

বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলা সাকিবের রান ১১৪৬৷ ২৯ ম্যাচে মুশফিকের ৮৭৭ রান৷ এই রান নিয়ে রয়ে...

৬, ৬, ৬, ৬, ৬—‘রিংকু সিং’ হ্যাভ ডান ইট!

শেষ ওভারে এমন খুনে ব্যাটিং এর আগে কেউ দেখেনি বোধহয়।

তাকে সময় দিন, যেন সে হারিয়ে না যায়

‘২০১৬ সালে রিজওয়ানের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেসময়ে যেহেতু তার বয়স কম ছিল, দু...