ঢাকা | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পরিশ্রমী রুবেল ফিরেছিলেন ৮ বছর পর

মশিউর রহমান শাওন
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২২ ০৯:৪১

পরিশ্রমী খেলোয়াড় ছিলেন মোশাররফ রুবেল৷ ফাইল ছবি৷ পরিশ্রমী খেলোয়াড় ছিলেন মোশাররফ রুবেল৷ ফাইল ছবি৷

জীবন বড়ই অদ্ভুদ৷ ক্রিকেট প্রেক্ষাপটে তা আরও অনিশ্চিত৷ কখনো দলের মধ্যমণি, কখনো অবহেলার পাত্র৷ এটিই একজন ক্রিকেটারের ক্রিকেটীয় জীবন৷

বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে কয়েকজন ভালো মানের পরিশ্রমী খেলোয়াড় রয়েছে তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সদ্য প্রয়াত মোশাররফ রুবেল৷ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মত আকৃষ্ট পারফরম্যান্স করতে না পারার কারনে ক্যারিয়ার দীর্ঘ না হলেও ঘরোয়া পর্যায়ে ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র৷

জাতীয় দলে একজন ভালো মানের স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে ২০০৮ সালে অভিষেক হলেও সে যাত্রায় ম্যাচ খেলেছিলেন মোটে চারটি৷ ব্যাট বল দুই বিভাগে মলিন হলে বাদ পড়েন প্রথম যাত্রায়৷ এরপর নিজের লক্ষ্যে জাতীয় দলকে প্রাধান্য না দিয়ে এই খেলোয়াড় প্রাধান্য দিয়েছিল ঘরোয়া ক্রিকেটে৷ পরিশ্রমের কোন কমতি ছিল না৷ পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আট বছর পর মিরাক্কেলভাবে ডাক পান জাতীয় দলে ৷ তবে প্রত্যাবর্তন সুখকর করতে পারেননি রুবেল৷

কথায় আছে পৃথিবীর সমস্ত মেধাবী হেরে গেলেও কোন পরিশ্রমী পরাজিত হতে পারে না ৷ তেমনি রুবেল ছিলেন পরিশ্রমী৷

একটা সময় সাকিবের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলেছিলেন আরাফাত সানী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিভিন্ন অপশন খুঁজছিলেন কোচ হাথুরুসিংহে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থেকে সোহরাওয়ার্দী শুভকে বেছে নিলেও স্কিল ট্রেনিংয়ে শুভর বোলিংয়ে খুশি হননি কোচ। নেটে এবং প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে শুভর বোলিং কোচের মন গলাতে পারেনি। এজন্য বিকল্প অপশন দেখতে চেয়েছেন হাথরুসিংহে।

তখন নির্বাচক হাবিবুল বাশার মোশাররফ হোসেন রুবেলের কথা বলেন। তাতে সমর্থন করেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাকে দেখতে চাওয়ায় ক্যাম্পে ডাক পড়ে রুবেলের।

কিন্তু, রুবেলকে যখন জাতীয় দলের জন্য ডাকা হয়, তখন তিনি ভারতের কলকাতায়। দুপুরে ফোন দিয়ে হাবিবুল বাশার তাকে পরদিন রিপোর্ট করতে বলেন। কিন্তু, বিকেলে বা রাতে কোনো ফ্লাইট পাচ্ছিলেন না রুবেল। উপায় না দেখে, কলকাতা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে হরিদাসপুরের (ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা) উদ্দেশে রওনা হন। এ পারে (বাংলাদেশ) এসে আবার গাড়ি নিয়ে যশোরে। রাতে যশোর থেকে পরদিন ভোরে ঢাকার ফ্লাইট ধরেন। বিমানবন্দর থেকে সোজা মিরপুর স্টেডিয়ামে রিপোর্ট করেন বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার।

অনুশীলন ও প্রস্তুতি ম্যাচে হাথুরুসিংহের মন জয় করায় জাতীয় দলের মূল স্কোয়াডেও তার সুযোগ হয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে তাকে নেওয়া হয়নি। তৃতীয় ওয়ানডেতে ফিরিয়ে এনে জাতীয় দলের জার্সি তুলে দেওয়া হয়। বলা যায়, এক কথায় দ্বিতীয় ‘অভিষেক’।


শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। ৮ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানকে হারাতে বড় ভূমিকা রাখেন। ম্যাচ শেষে রুবেলকে নিয়ে তখনকার অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, ‘রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে এসেছে মোশাররফ রুবেল। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে কেউ এসে যদি পারফরম্যান্স করে, তখন টিম আরো বুস্ট আপ হয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এটা অবশ্যই তার জন্য পজিটিভ, আমাদের জন্যও পজিটিভ। তাকে যে ভূমিকার জন্য দলে আনা হয়েছে, সে তা পূরণ করতে পেরেছে। আশা করি, ওর নিজেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং সামনে আরও ভালো করতে পারবে।’

কিন্তু বেশিদিন জাতীয় দলে থাকতে পারেননি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের সিরিজে আশানুরুপ কিছু না পাওয়ায় বাদ পড়তে হয়। এরপরও রুবেল ঘরোয়া ক্রিকেটে হাল ছাড়েননি। শতভাগ নিবেদন দিয়ে খেলে গেছেন।

কিন্তু, ২০১৯ সালের পর বিপিএল তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ হয়ে থাকল। বিপিএলের পর তার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। সেই টিউমারের সঙ্গে লড়লেন তিন বছর। মাঠের যুদ্ধে ব্যাট-বলে বিজয়ের পতাকা উড়ালে জীবনের লড়াইয়ে রুবেল পারলেন না। সবাইকে কাঁদিয়ে আজ তিনি পাড়ি দিলেন অন্তিমে।

-নট আউট/এমআরএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

তিন পান্ডবের পাঁচ সেঞ্চুরি, ইমপ্যাক্টে এগিয়ে.....

বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলা সাকিবের রান ১১৪৬৷ ২৯ ম্যাচে মুশফিকের ৮৭৭ রান৷ এই রান নিয়ে রয়ে...

৬, ৬, ৬, ৬, ৬—‘রিংকু সিং’ হ্যাভ ডান ইট!

শেষ ওভারে এমন খুনে ব্যাটিং এর আগে কেউ দেখেনি বোধহয়।

তাকে সময় দিন, যেন সে হারিয়ে না যায়

‘২০১৬ সালে রিজওয়ানের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেসময়ে যেহেতু তার বয়স কম ছিল, দু...