ঢাকা | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাংলার কোহলি অপ্রাপ্তির নাম

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২২ ০০:৫৬

সাব্বির রহমান। ফাইল ছবি সাব্বির রহমান। ফাইল ছবি

মশিউর রহমান শাওন: ক্রিকেটের তিন সংস্করণের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে দূর্বল কোনটিতে এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশই বলে ওঠবে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে৷ দিন যায় দিন আসে সাথে বাড়ে সাফল্য৷ ক্রিকেটের সংগ্রহশালায় যেটুকু গচ্ছিত কিংবা সঞ্চিত রয়েছে তার প্রায় সবটুকুই ওডিআই ফরম্যাটের কল্যাণে৷ 

বাংলার ক্রিকেটে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের যোগ্য খেলোয়াড় নেই এটি বললে বলা হবে চরম মিথ্যে৷ তবে শুরুতে যতটা কার্যকরী সময়ের ব্যবধানে আকাশচুম্বী প্রশংসায় ততটাই বোঝা হয়ে ওঠে দলের জন্য৷ তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র খেলোয়াড়ের দোষ থাকার কথা নয়৷ ভালো সময়ে দলে থাকবে, খারাপ সময়ে জায়গা হারাবে এটিই নিষ্ঠুর বাস্তবতা৷ তবে জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাওয়া খেলোয়াড়দের প্রতি স্থানীয় কোচেরা কিংবা স্বয়ং বিসিবি কতটা আন্তরিক তা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন৷ 

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে চার-ছক্কার ফুলঝরিতে যতটা মুগ্ধতা ছড়িয়েছে তার থেকেও বেশি হতাশ করেছেন সাব্বির রহমান৷ এই ডান হাতি হার্ট হিটার ব্যাটারকে দেশের ক্রিকেটে টি-টুয়েন্টির ফেরিওয়ালা বলা যেতেই পারে৷ ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সংখ্যা ১২১৷ ব্যক্তিগত সংগ্রহে এক শতকের সাথে রয়েছে ১৪ অর্ধশতক৷ ম্যাচ বিচারে সফলতার পাল্লা ভারি না হলেও সফলতার এই সমষ্টি এসেছিল শুরুতেই৷ 

সাব্বির রহমান দেশের জার্সিতে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০১৯ সালে৷ পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব কিংবা স্থানীয়ের কোচদের অনাগ্রহ যাই থাকুক না কেন নিজের মধ্যে একাগ্রতার কমতি ছিল এটি স্বয়ং সাব্বির মেনে নিতেও বাধ্য৷ তবে বাদ পড়ার পরে যদি তাকে নিয়ে সঠিক ভাবে কাজ করা হতো তা হলে হয়তো সংগ্রশালায় আরও কিছু সফলতা টি-টুয়েন্টি ফরম্যাট থেকে আসতো৷ 

বাংলাদেশ সফরে এসে সাব্বিরের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার নাথান লায়ন৷ সাব্বির রহমানকে খেতাব দিয়েছিলেন বাংলার কোহলি৷ তবে সেই খেতাবপ্রাপ্ত সাব্বির এখন শুধুই আক্ষেপের নাম৷ 

বিশ্বের অন্যতম মেগাসিটির শহর ঢাকা৷ এই শহরের হোম অফ ক্রিকেটে ২০১৬ সালে বসেছিল সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব লড়াইয়ের আসর৷ ব্যাট হাতে সফল সাব্বির হয়েছিলেন টূর্ণামেন্ট সেরা খেলোয়াড়৷ সেসময়ে বাইশ গজে বোলারদের শাসন করা বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, তিলকারত্নে দিলশান, শোয়েব মালিক, শহীদ আফ্রিদির মত খেলোয়াড়দের টপকিয়ে মূল পর্বে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট তরুণদের উত্থান-পতনের গল্প নতুন কিছু নয়৷ একটা সময় ছিল যখন বাদ পড়েও ফিরে আসার উদাহারণ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হতো অন্যদেশের খেলোয়াড়ের নাম৷ তবে বর্তমানে সেদিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই বললেই চলে৷ ঘরের সন্তান তাসকিন এখন ফিরে আসার সবচেয়ে বড় উদাহারণ৷ 

সাব্বির দল থেকে বাদ পড়ার পর প্রকৃতির নিয়মে কেটে গছে তিনটি বছর৷ সাব্বিরের প্রতিভায় আকৃষ্ট হয়ে একটা সময় নির্বাচকরাও বলেছিলেন সাব্বির দলে থাকা মানে ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বর জায়গা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা। সেই নির্বাচকরাই সাব্বিরকে বর্তমান সময়ে স্কোয়াডে রাখার পক্ষে নয়৷ কারন একটি ধারাবাহিকতার প্রচন্ড অভাব৷ 

ক্যারিয়ারের শুরুতে অনবদ্য করে প্রশংসার জোয়াড়ে গা ভাসিয়ে নানা সময়ে জড়িয়েছেন বিতর্কে। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে নিষিদ্ধও হন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্তে। তবে বাংলার সেরা কাপ্তান মাশরাফির অনুরোধে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সুযোগ দেওয়া হয় জাতীয় দলে৷ কিন্তু ফলাফল হয়নি সূদূরপ্রসারী৷ ২০১৯ বিশ্বকাপের পরেই দুটো সিরিজ খেলার পর সাব্বিরকে আর বিবেচনায় আনা হয়নি জাতীয় দলে।

জাতীয় দলে না থাকা সাব্বির বর্তমানে হারিয়ে নিজেকে খুঁজে পেতে ব্যস্ত৷ তবে ভাগ্য সহায় হচ্ছেনা কোনভাবেই৷ সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে প্রমান করতে পারেননি নিজেকে৷ চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লীগেও টাইমলাইনে আসতে পারছেন না বাকিদের ভিড়ে৷ 

ক্যারিয়ারের শুরুতে যত্নশীল না থাকার ফলে শতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সাব্বিরকে হরহামেশাই দেখা যায় পাড়ার ক্রিকেটে৷ খ্যাপ খেলতে দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ছুটে চলা নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে দেশকে স্বপ্ন দেখানো খেলোয়াড়টির৷ 

ক্রিকেটে বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা৷ পড়ন্ত বেলাতেও দূরন্ত পাকিস্তানের হাফিজ৷ সবচেয়ে বেশি বয়স নিয়েও আইপিএলে রেকর্ড করতেছেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি৷ সে বিবেচনায় ফুরিয়ে যায়নি সাব্বিরের সময়৷ বয়স সবে মাত্র ৩০ ৷ ফলে হাতে রয়েছে দীর্ঘসময়৷ চেষ্ঠা করলে মিলতে পারে কাঙ্খিত ফলাফল৷ 

সাব্বিরকে হারানো দেশের ক্রিকেটে জন্য অপ্রাপ্তি৷ ভক্তদের জন্য কষ্টের৷ সাব্বির সমহীমায় ফিরতে পারলে অপ্রাপ্তির কষ্ট লাঘব হবে ক্রিকেট পাড়ায়৷

-নট আউট

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

তিন পান্ডবের পাঁচ সেঞ্চুরি, ইমপ্যাক্টে এগিয়ে.....

বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলা সাকিবের রান ১১৪৬৷ ২৯ ম্যাচে মুশফিকের ৮৭৭ রান৷ এই রান নিয়ে রয়ে...

৬, ৬, ৬, ৬, ৬—‘রিংকু সিং’ হ্যাভ ডান ইট!

শেষ ওভারে এমন খুনে ব্যাটিং এর আগে কেউ দেখেনি বোধহয়।

তাকে সময় দিন, যেন সে হারিয়ে না যায়

‘২০১৬ সালে রিজওয়ানের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেসময়ে যেহেতু তার বয়স কম ছিল, দু...