ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা দেখছেন বুলবুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২২ ০০:২৩

অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান৷ ছবি সংগৃহীত অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান৷ ছবি সংগৃহীত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট: বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ডেভলপমেন্ট অফিসার। অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান চাকুরী সূত্রে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নেই থাকেন। তবে কাজের সূত্রে ঘুরে বেড়ান ক্রিকেট বিশ্বে।

প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপের অধিনায়ক সম্প্রতি একান্ত আলাপে আইসিসির সদ্য সমাপ্ত মিটিং, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন বিস্তারিত। যা নটআউটের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। কেমন ছিল বার্মিংহামে আইসিসির মিটিং?

বুলবুল: খুব ব্যস্ত ছিলাম। আইসিসির এজিএম ছিল। আইসিসির যে ১০৬ টা দেশ, মোটামুটি সবাই এসেছিল। আমরা একসাথে হতে পেরেছি। বিশেষ করে করোনার কারণে আমরা অনেক দিন স্ব-শরীরে মিটিং করতে পারিনি। আমাদের সবার জন্য স্পেশাল মিটিং ছিল। সবকিছু মিলিয়ে বার্মিংহামে সময়টা ভালোই কেটেছে আমাদের।

প্রশ্ন: এই মিটিং থেকেই কি ২০২৪ নারী টি-২০ বিশ্বকাপ বাংলাদেশে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে?

বুলবুল: আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এবার আইসিসির মিটিংয়ের থিম ছিল শতভাগ ক্রিকেট (হান্ড্রেড পারসেন্ট ক্রিকেট)। এটা হচ্ছে মেয়েদের ক্রিকেট। মেয়েদের ক্রিকেটকে আইসিসি এখন বড় প্রাধান্য দিচ্ছে। আইসিসির কৌশলের বড় অংশ। মেয়েদের টি-২০ বিশ্বকাপ, ২০২৪ সালে যেটা বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া আমি বলবো। এখন পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা মেয়ে। তারা যদি ক্রিকেট খেলে, তাহলে পুরো পরিবার ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হবে।


আরেকটা বড় ব্যাপার হচ্ছে যে বাংলাদেশের মেয়েদের দল খুব ভালো করছে। আশা করবো আগামী জানুয়ারিতে যে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ মেয়েদের, সেখানে বাংলাদেশ ভালো করবে। সেটার ধারাবাহিকতা ২০২৪ সালেও থাকবে আশা করি। আমি বিশ্বাস করি মেয়েদের ক্রিকেট আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বিশ্বকাপটা যদি ভালোভাবে আয়োজন করা যায় এবং বাংলাদেশের দলটা যদি ভালো করে, তাহলে এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া হবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা কেমন দেখছেন?

বুলবুল: আমি বলার চেয়ে আসলে পরিসংখ্যানই বলে দিবে আমাদের দল কেমন করছে। সবাই এটা ফলো করে, সবাই দেখছে টি-২০ ও টেস্টে বাংলাদেশ ভালো করছে না। ওয়ানডেতে ভালো করে, করে যাচ্ছে। এর মানে এই না যে বাংলাদেশ টি-২০ ও টেস্টে খুব খারাপ খেলে। কোচিংয়ে একটা কথা আছে, কোচিং কথা বলে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে, অতীতের ভুল নিয়ে নয়। আমরা যদি অতীতের ভুল গুলো শুধরে নিতে পারি, তাহলে আমরা অন্যান্য ফরম্যাটগুলোতেও ভালো করবো। এমন কোনো দল নেই যে সব ফরম্যাটে ভালো খেলে। আমাদেরকে মনোযোগ দিতে হবে যে সব জায়গায় আমরা ভালো করছি না, সেখানে উন্নতি করতে হবে।

কিন্তু আমরা যেটা করি তা হলো, আমরা সমালোচনা অনেক বেশি করি। আবার আমরা অনেক সময় সমালোচনা করার পথ খুঁজে দেই। যেমন ধরেন টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করার জন্য যে ধরনের মেধাসম্পন্ন ক্রিকেটার দরকার, প্রস্তুতি দরকার, সেগুলোতে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি না। এজন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছি।

টি-২০ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ক্রিকেট। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে কয়টা টি-২০ টুর্নামেন্ট হয়, কয়টা বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটার আমরা তৈরি করতে পেরেছি বিশ্বমানের। সেটাও দেখতে হবে। শুধুমাত্র সমালোচনা করবো, এটা নয়, তার চেয়ে বড় সমাধানগুলো খুঁজে বের করা। আমি বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে যে ক্রিকেট দর্শক আছে, প্রতিভা আছে তাতে করে বাংলাদেশ সব ফরম্যাটেই ভালো করার দল। তবে এখানে আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে, পরিকল্পনাগুলো যেন ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রশ্ন: সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছাড়াই জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য নতুন টি-২০ দল করেছে বিসিবি। এই পদক্ষেপকে আপনি কিভাবে দেখেন?

বুলবুল: জিম্বাবুয়ে সম্ভবত আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একটু দুর্বল দল। সেখানেই সুযোগটা নেয়া উচিত বাংলাদেশের। আর সিনিয়ররা হচ্ছে দলের সম্পদ। কারণ তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে সেটা খেলার মাধ্যমেই হয়েছে। বিশ্বকাপ তো কয়েকবছর পর পর হয়। সেক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে এসে বড় বড় সিদ্ধান্ত দলের জন্য কতটুকু কাজে লাগবে তা আমরা জানি না। কোন কোন সিদ্ধান্ত কাজে লাগবে আমরা জানি না। আমরা সময় ট্রায়াল এন্ড এরর ভিত্তিতে কাজ করি। নির্দিষ্ট কোনো কাজ করি না।

জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য এই সিদ্ধান্ত আপনি বললেন, আমার কাছে মনে হয় এটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত। তরুণদের পরখ করে নেয়ার সুযোগ। খেলায় হার-জিত আছেই। তবে সিনিয়র প্লেয়ারদের অবশ্যই বড় মঞ্চে রাখা উচিত। তারা হচ্ছে দেশের সম্পদ। তাদেরকে জায়গা মতো ব্যবহার করা উচিত।

প্রশ্ন: সামনেই অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ বিশ্বকাপ। আপনি অনেক বছর অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। কন্ডিশন বিবেচনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

বুলবুল: গত বিশ্বকাপ যেটা আমরা ওমান ও দুবাইয়ে খেললাম। সেখানে কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল না। যদিও বলি আমরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের সাথে জিতেছি, যেই উইকেটে খেলেছিলাম, এমন উইকেট আমরা বিশ্বকাপে পাইনি।

উইকেট বড় ফ্যাক্টর হবে। অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ান উইকেটগুলো বেশ স্পোর্টিং থাকবে। তাদের উইকেটগুলো ব্যাটিং উইকেট হয়, উইকেটে গতি থাকে একটু বেশি। তাই আমাদের প্রস্তুতি তেমন হওয়া উচিত। বিশ্বকাপের আগে আমরা ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবো নিউজিল্যান্ডে, এটা আমাদের জন্য বড় অনুশীলন হয়ে যাবে। তাই আমি আশা করি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করবে। বাংলাদেশ কিন্তু এবার সরাসরি মূল পর্বে খেলছে। অবশ্যই ভালো করার সক্ষমতা আছে। এই ফরম্যাটের কিছু কৌশল আছে, যেমন স্পেশাল বোলার দরকার, সাকিবের সঙ্গে আমাদের এমন কিছু বোলার লাগবে, যারা রানটা আটকে ধরবে। বোলিংটা একটা বড় ব্যাপার। আর পাওয়ার প্লেতে আমরা খুব দুর্বল। আমরা যদি পাওয়ার প্লে তে উন্নতি করতে পারি, বৈচিত্র্যময় বোলিং করতে পারি, তাহলে আমাদের ভালো করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ বিগ ব্যাশের ড্রাফটে তিন বাংলাদেশি

প্রশ্ন: সাবেক অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপের আগে দলের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে?

বুলবুল: আমাদের ইতিবাচক থেকে এগুতে হবে। আমরা অনেকদিন ম্যাচ জিততে পারি নি। তার মানে এই না যে আমরা জিততে পারি না, পারবো না। আমরা আমাদের শক্তিকে কিভাবে ব্যবহার করছি এটা বড় ব্যাপার। আমি আশা করি বাংলাদেশ ভালো করবে।

তবে জয়ের জন্য যে অস্ত্রগুলো দরকার, সেগুলো সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসতে হবে। ক্রিকেট খেলায় বড় বিষয় হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক দিকটা। এগুলো নিয়ে কোচরা কতটা দলের সঙ্গে কাজ করছে এটা বড় বিষয়। এখন ক্রিকেট কিন্তু নিউরোলজিক্যাল দিকে চলে গেছে, কোচরা খেলোয়াড়ের মাথা নিয়ে কাজ করে। সেই জায়গায় আমরা কতটা কাজ করছি, কোচিং স্টাফ যারা আছে, সেটা তারা খেলোয়াড়দের কতটা বোঝাতে পারছে, এটা দরকার। সর্বোচ্চ পর্যায় মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজের ধরন আলাদা, তাদের সঙ্গে কাজের মানসিক ভাষা অন্যরকম থাকে। কোচরা কতটা তা নিয়ে কাজ করতে পারছে এটা একটা বড় ব্যাপার।
আমাদের ক্রিকেটাররা দেখবেন যখন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে তখন অনেক ভালো পারফর্ম করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতে হলে স্কিল, প্রতিভা তো আছে এখন নিউরোলজিক্যাল বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ সাধারণত ১৬০-১৬৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলে। কিছুদিন আগে মাহমুদউল্লাহ এমনটা বলেছেন। এ বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

বুলবুল: কোনো ফিক্সড মাইন্ডসেট থাকা উচিত না। এসব জায়গায় ওপেন মাইন্ডসেট থাকা উচিত। যে কোনো অবস্থান থেকে আমি জিতবো, এজন্য যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা নিতে হবে। টি-২০ ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ আছে প্রথম ৬ ওভার, শেষে ৩ ওভার। এগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এখানে ভালো করার জন্য আমাদের কি কি অস্ত্র আছে, প্রস্তুতি কতটা আছে? সবমিলিয়ে চিন্তা থাকতে হবে আমরা জেতার জন্য খেলবো, পরিস্থিতি যাই হোক। জয়ের সব রসদ আমাদের আছে। আশা করি সবকিছু একসঙ্গে কাজ করবে। এই পুরো বিষয়টা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করাটা অধিনায়ক, কোচ, টিম ম্যানেজমেন্টের উপর নির্ভর করে অনেকভাবে। আশা করি তারা এটা করবে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি ওয়ানডে নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। অনেকে বলছে ওয়ানডে তুলে দিতে। এ বিষয়টা মানে আইসিসিতে ওয়ানডের ভবিষ্যত নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা?

বুলবুল: টি-২০ জনপ্রিয় হচ্ছে বেশি। সব ফরম্যাটগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে। দরকার হচ্ছে দলগুলোকে সাহায্য করা এখানে ভালো করতে। না, আইসিসিতে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।

 

-নট আউট/এমজেএ/এমআরএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

প্রথম ওয়ানডেতে হোঁচট খেল বিসিবি একাদশ

ভারতের এমএ চিরাম্বরম স্টেডিয়ামে সোমবার প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছিল তামিলনাড়ু ক্রিক...

ভারত সিরিজের দল ঘোষণা বাংলাদেশের

জিম্বাবুয়ে সফরের দল থেকে বাদ পড়েছেন মোসাদ্দেক সৈকত, শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম।

জয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ

৭৪ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানের টার্গেটেই কঠিন বানিয়ে ফেলে ভারত।