ঢাকা | সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে তীরে এসে তরী ডোবাল কলকাতা

নট আউট ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২ ১০:৩৫

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে ১৪০ রানে অপরাজিত থাকেন কুইন্টন ডি কক। ছবি: আইপিএল ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে ১৪০ রানে অপরাজিত থাকেন কুইন্টন ডি কক। ছবি: আইপিএল

নট আউট ডেস্কঃ জিতলেই শেষ চার নিশ্চিত লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের। অন্যদিকে কলকাতার সামনে অগ্নি পরিক্ষা। এদিন শুধু জিতলেই চলতো না নাইটদের, তাকিয়ে থাকতে হতো অন্য দলগুলোর দিকেও। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ৬৬ নম্বর ম্যাচটি ছিল তাই সুপার হাই ভোল্টেজ। শেষ পর্যন্ত তীরে এসে কলকাতার তরী ডুবলেও, পয়সা উসুল করেই বাড়ি ফিরেছে দর্শকরা।

মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ডি কক ও কেএল রাহুলের রেকর্ডগড়া জুটিতে রান উৎসব করেছিল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। জবাবে শেষ দিকে রিংকু সিং যেন হয়ে উঠেন প্রথম ইনিংসের ডি ককরই প্রতিচ্ছবি। অবিশ্বাস্যভাবে কলকাতাকে ম্যাচে ফিরিয়ে জয়টা প্রায় এনেই দিয়েছিলেন, তবে দলকে তীরে এনেও পারেননি তরিটা ভেড়াতে। চাপের মুহূর্তে এভিন লুইসের অবিশ্বাস্য ক্যাচে সমাধি সলিল হয় রিংকুর ঝড়ো ইনিংসের। শেষ পর্যন্ত চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শেষ বলে জয় পায় লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। এই জয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত করে দলটি।

এদিন লক্ষ্ণৌর দেওয়া ২১১ রানের পাহাড়সম টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মহসিন খানের তোপের মুখে পড়ে কলকাতা। দলীয় ৯ রানের মাথায় দলটি হারায় দুই ওপেনার ভেঙ্কাটেশ আইয়ার (০) ও অভিজিৎ তমারের উইকেট (৪)। দু'জনকেই ফেরান লক্ষ্ণৌ পেসার মহসিন খান। চাপে পড়া কলকাতা এরপর পথ দেখান অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার ও নীতিশ রানা। তৃতীয় উইকেটে দ্রুতই দু'জন তুলতে থাকেন রান।

দু'জন মিলে গড়েন পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি। এই দুজনের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখে কলকাতা। ঝড় তোলা রানাকে ফিরিয়ে নাইটদের ডেয়ার আঘাত হানেন গৌতম। ৯ চারে ২২ বলে ঝড়ো ৪২ রানে রানার বিদায়ের পর, চওড়া হয় আইয়ারের ব্যাট। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন স্যাম বিলিংস। চর্তুথ উইকেট জুটিতে এই দু'জন মিলেও গড়েন পঞ্চাশোর্ধ রানের জোট৷ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন নাইট কাপ্তান শ্রেয়াস আইয়ার। এরপরেই তাকে সাজঘরে ফেরান মার্কাস স্টয়নিস। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৯ বলে ৫০ রানে ফিরেন তিনি।

এরপর বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরে লক্ষ্ণৌ। শুরু থেকেই দ্রুত রান তুলতে থাকা স্যাম বিলিংস ব্যাক্তিগত ৩৬ রানে (২৪ বলে) কাটা পড়লে, মহসিন খান ফেরান আন্দ্রে রাসেলকে। আর তাতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই নিয়ে নেন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। জয়ের জন্য শেষ চার ওভারে দলটির প্রয়োজন ছিল ৬৭ রান। ১৭তম ওভারে রাসেলের উইকেট হারালেও কলকাতা তুলতে পারে ১২ রান।

জয়ের জন্য শেষ ১৮ বলে কলকাতার প্রয়োজন ছিল ৫৫ রান। আপাদমস্তক তা অসম্ভব মনে হলেও, আভেশ খানকে দুই ছয় হাঁকিয়ে ১৮তম ওভারে সুনীল নারিন এনে দেন ১৭ রান৷ আর তাতেই ম্যাচ ফেরার সম্ভাবনা কিঞ্চিৎ বাঁচায় কলকাতা। এর পরেই ঝড় তোলেন রিংকু সিং। জেসন হোল্ডারের করা ১৯তম ওভারে দুই ছক্কায় রিংকু এনে দেন ১৭ রান৷ আর তাতেই ম্যাচের সমীকরণ গিয়ে দাঁড়ায় ৬ বলে ২১ রানে। লক্ষ্ণৌর পক্ষে ইনিংসের শেষ ওভার করতে আসেন স্টয়নিস। 

ওভারের প্রথম তিন বলে এক চার ও দুই ছক্কায় রিংকু এনে দেন ১৬রান। আর তাতেই ম্যাচের দৃশ্যপট পুরোটাই যায় পালটে। পেন্ডুলামে দুলতে থাকা ম্যাচে জয়ের জন্য কলকাতার শেষ তিন বলে প্রয়োজন ছিল ৫ রান। ওভারের চর্তুথ বলে দুই রান নিয়ে রিংকু সেই সমীকরণ নিয়ে আসেন ২ বলে ৩ রানে। ওভারের পঞ্চম বলে স্টয়নিসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে এক্সটা কাভারে এভিন লুইসের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন রিংকু। আর তাতেই অসাধারণ এক ইনিংসের হয় করুণ সমাপ্তি। ২ চার ও ৪ ছক্কায় ১৫ বলে ৪০ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে রিংকু ফিরেন দলকে তীরে এনে। শেষ বলে জিততে কলকাতার ৩ রান প্রয়োজন থাকলেও, স্টয়নিসের দুর্দান্ত ইয়র্কারের বোল্ড হয়ে ফিরেন উমেশ যাদব। তাতে দুই রানের নাটকীয় জয় পায় লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। দলটির পক্ষে মহসিন খান ও মার্কাস স্টয়নিস নেন তিনটি করে উইকেট। 

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে লক্ষ্ণৌর দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও কেএল রাহুল দলকে শুভসূচনা এনে দেন। উদ্বোধনী জুটিতেই এদিন দলকে টেনে নিয়ে যান দু'জন। শুরু থেকেই ঝড়ো ব্যাটিং করা ডি কক ৩৬ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এরপরেই বেশ আগ্রাসী হয়ে ব্যাট চালান এই ওপেনার। ওপেনিংয়ে শতাধিক রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক কেএল রাহুলও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। শেষ দিকে কলকাতার বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলায় মেতে উঠেন কুইন্টন ডি কক। 

কলকাতার বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ৫৯ বলেই তুলে নেন আসরে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। আর তাতেই রান পাহাড়ে চড়ে বসে লক্ষ্ণৌ। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্ণৌর আর ওপেনিং জুটিই ভাঙতে পারেনি কলকাতার বোলাররা। ততক্ষণে ডি কক ও রাহুলের ওপেনিং জুটি পেরিয়ে যায় দুইশ রানের গণ্ডি। মুম্বাইয়ের এক পশলা ডি কক ঝড়ে লক্ষ্ণৌ নির্ধারিত ২০ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে গড়ে ২১০ রানের পাহাড়। 

এদিকে রেকর্ডগড়া জুটিতে এদিন একাধিক রেকর্ডও নিজেদের করে নেন কুইন্টন ডি কক ও কে এল রাহুল। ১০টি করে চার ও ছক্কায় ডি ককের ৭০ বলে ১৪০ রানের ইনিংসটি আইপিএলের ইতিহাসে এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এদিকে আইপিএলের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোন ওপেনিং জুটিতেও পার করে অপরাজিত দুইশ রানের গণ্ডি। ডি কককে দারুণ সঙ্গ দেওয়া রাহুল অপরাজিত থাকেন ৫১ বলে ৬৮ রান করে (৩ চার ও ৪ ছক্কা)।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

লিটনের পর সাকিবের ঠিকানা কলকাতায়

লিটন দাসের পর দ্বিতীয় ধাপে দল পেলেন টাইগার তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ভিত্তিমূল...

আইপিএলে দল পেলেন লিটন দাস

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দল পেলেন টাইগার তারকা ব্যাটার লিটন দাস। প্রথম দফায় অ...

আইপিএল নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় বাংলাদেশের ‘৪’

দেশী-বিদেশী সর্বমোট ৯৯১ জন ক্রিকেটার করেছিলেন নিবন্ধন। যার মধ্যে ছিল ৬ বাংলাদেশী ক্রি...