ঢাকা | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাদা কালো যুগের সোনালী জুটি

মশিউর রহমান শাওন
প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২২ ০০:৩৭

ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিস জুটি৷ ছবি সংগৃহীত ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিস জুটি৷ ছবি সংগৃহীত

মশিউর রহমান শাওন: নব্বই দশকের সাদা কালো যুগে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাছে ভয়ঙ্কর ছিল পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিস জুটি৷ ওয়াসিম যেখানে বাঁ-হাতে গতির ভেলকি দেখাতো সেখানে ওয়াকারের ছিল ডান হাতের জাদু৷ ছোট বেলায় দুজনের স্বপ্ন ভিন্ন হলেও সময়ের ব্যবধানে মিলে মিশে হয়েছে একাকার৷

ওয়াসিম-ওয়াকারের সমসাময়িক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ডোনাল্ড–শন পোলক, অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা–ডেমিয়েন ফ্লেমিং এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোস ফাস্ট বোলিং জুটি হিসেবে ঝড় তুলেছিলেন৷ তবে বিশ্লেষকদের অনেকের মতে রাজার খেলায় রাজত্ব ছিল ওয়াসিম-ওয়াকারের৷

ক্রিকেট যুদ্ধে দুজনে ছিলেন বিশেষ প্রতিভার মালিক৷ ওয়াসিম যেখানে নতুন বলে নিজের খেয়াল খুশিমতো ইনসুইং করাতে পারত সেখানে ওয়াকার ইউনিসকে এই ধরনের ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করতে হতো পুরনো বলের জন্য৷ কারন নতুন বলে আউটসুইঙ্গার করতে পারলেও তিনি ইনসুইং করতে পারতেন না৷ পুরনো বলে ওয়াকার স্ট্যাম্পের বাইরে থেকে বল ভেতরে ঢোকানোর কাজে পটু ছিলেন৷ প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতির ইনসুইং ইয়র্কার সামলানোর কাজ ঠিকমত করার মতো খেলোয়াড়ের সংখ্যা ছিল খুবই কম৷

নব্বই দশকের প্রায় পুরোটা জুড়েই তারা ক্রিকেট দুনিয়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তাদের জুটিকে দেওয়া হয়েছিল 'টু ডব্লিউ' উপাধি৷

ওয়াসিম-ওয়াকার দুজনেরই একটা বিশেষ ক্ষমতা ছিল 'ব্যানানা সুইং'। তীব্র গতির  বলকে বাতাসে বা শূন্যের ওপরে বাঁক খাওয়াতে পারতেন তারা। যার গতিপথ ছিল অনেকটা 'কলা'র আকৃতির। ধারাভাষ্যকাররা ক্রিকেটের অভিনব ও নান্দনিক এই শিল্পের নাম দিয়েছিলেন 'ব্যানানা সুইং'। বিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে অত্যন্ত কার্যকরী অস্ত্র এটি।

বয়স নামক সংখ্যার বিচারে ওয়াসিম আকরাম সিনিয়র হলেও পাকিস্তান জার্সিতে দুজনে ইমরান খানের যোগ্য উত্তরসূরী হওয়ার বদৌলতে হয়ে উঠেছিলেন প্রাণের বন্ধু৷ ক্যারিয়ার দৈর্ঘ্যের বিচারেও এগিয়ে ছিলেন বাঁ-হাতি দ্রুতগতির বোলার৷ তবে দুজনের ইতি ঘটেছিল একই বছরেই৷ এক সঙ্গে যে কয়েক বছর খেলেছেন পাকিস্তান ক্রিকেটকে নিজেদের দিক থেকে সর্বোচ্চ দিয়েছেন৷ দুজনের পরিসংখ্যান বলছে-

ওয়াসিম আকরাম ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে ১০৪ টেস্টে নিয়েছেন ৪১৪ উইকেট৷ এক ইনিংস সেরা বোলিং ফিগার ১১৯ রান খরচে ৭ উইকেট৷ ম্যাচের বিচারে ১১০ রানে ১১ উইকেট৷ পাঁচ উইকেট পেয়েছেন মোট ২৫ বার, দশ উইকেট পাওয়ার সংখ্যা ৫ বার৷ টেস্টে ব্যাটিং নৈপূণ্যও দেখিয়েছেন তিনি৷  সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৫৭ রান৷ মোট রান ২৭৯৮৷ এছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৫৬ ম্যাচে ৫০২ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি করেছেন ৩৭১৭ রান৷

ওয়াকার ইউনিস টেস্ট ফরম্যাটে ৮৭ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৭৩ উইকেট৷ যেখানে ৫ উইকেট ছিল ২২ বার এবং দশ উইকেট ৫ বার, এক ইনিংসে নিয়েছেন ৭ উইকেট৷ যেখানে খরচ করেছেন মাত্র ৭৬ রান৷ এছাড়া ১৩৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ১৩ উইকেট৷ ওয়ানডেতে ২৬২ ম্যাচে ৪১৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি৷ ৩৬ রানে ৭ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড আছে তার ঝুলিতে৷

ওয়াসিম-ওয়াকার একসাথে খেলেছেন ৬১ টেস্ট৷ যেখানে জয় সংখ্যা ২৮টি৷ এই জুটির অধীনে পাকিস্তানের টেস্ট জয় ছিল ৪৬ শতাংশ৷ এই ২৮ জয়ে দুজনে নিয়েছেন ৩২৬ উইকেট৷ এই পরিসংখ্যানে ওয়াকার ইউনিস নিয়েছে ১৬৫ উইকেট অপরদিকে ওয়াসিম আকরাম ১৬১টি৷ প্রতি ম্যাচে গড় অনুযায়ী উইকেট নেওয়ার সংখ্যাটি প্রায় ১২৷

এছাড়াও ৬১ টেস্টে দুজনে নিয়েছেন ৫৫৯ উইকেট৷ যেখানে ওয়াসিম আকরামের সংগ্রহ ২৮২ এবং ওয়াকার ইউনিসের সংগ্রহ ২৭৭৷ এই সময়ে দুজনে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ৩৭ বার৷ তারমধ্যে ওয়াসিম আকরাম ২০ বার এবং ওয়াকার ইউনিস ১৭ বার৷ দুজনে মিলে ১০ উইকেট নিয়েছেন ৭ বার৷ ওয়াসিমের চার বারের বিপরীতে ওয়াকারের সংগ্রহ ৩ বার৷

ফিরে যাওয়া যাক আলোচনার প্রথমে৷ শুরুতে ওয়াসিম আকরামের যেখানে স্বপ্ন ছিল একজন টেবিল টেনিস তারকা হওয়ার সেখানে ওয়াকার ইউনিসের ছিল লেগ স্পিনার হওয়া৷ তবে ক্যারিয়ারে দুজনে হয়ে উঠেছেন দ্রুতগতির বোলার৷ পরিশেষে যা রূপ নিয়েছে বিশ্বসেরা জুটিতে৷ তাদের জুটি সেসময়ে যেমন ছিল সেরা, বর্তমানে না থেকেও তারা সেরাদের উপরের সারিতেই৷ সামগ্রিক দিক দিয়ে তাদের অতিক্রম করার মতো জুটি বর্তমান ক্রিকেট দুনিয়ায় বিরল৷

ওয়াসিম আকরামের জন্ম ১৯৬৬ সালের ৩ জুন৷ পাকিস্তানের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল ১৯৮৫ সালে৷ টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার আগে তিনি  প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেননি৷ দেশের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০০৩ সালে৷

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ওয়াকার ইউনিসের জন্ম ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর৷ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হয়েছিল ১৯৮৯ সালে৷ সর্বশেষ ম্যাচ তিনি খেলেছেন ২০০৩ সালে৷

 

-নট আউট/এমআরএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

তিন পান্ডবের পাঁচ সেঞ্চুরি, ইমপ্যাক্টে এগিয়ে.....

বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলা সাকিবের রান ১১৪৬৷ ২৯ ম্যাচে মুশফিকের ৮৭৭ রান৷ এই রান নিয়ে রয়ে...

৬, ৬, ৬, ৬, ৬—‘রিংকু সিং’ হ্যাভ ডান ইট!

শেষ ওভারে এমন খুনে ব্যাটিং এর আগে কেউ দেখেনি বোধহয়।

তাকে সময় দিন, যেন সে হারিয়ে না যায়

‘২০১৬ সালে রিজওয়ানের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেসময়ে যেহেতু তার বয়স কম ছিল, দু...