ঢাকা | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিষন্ন মনে অনুপ্রেরণা প্রয়োজন, তাদের গল্প রাখা যায় স্মৃতিতে!

মশিউর রহমান শাওন
প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২২ ২০:৫১

বাংলাদেশ ক্রিকেট। ফাইল ছবি বাংলাদেশ ক্রিকেট। ফাইল ছবি

মশিউর রহমান শাওনঃ খুব করে মরে যেতে ইচ্ছে হয়৷ পাহাড় সমান ব্যর্থতাগুলো কেড়ে নেয় মনের সজীবতা৷ একাকিত্ব হতে চায় পরম বন্ধু৷ চারিপার্শ্বে সমালোচনা কিংবা হাশি-তামাশা ৷ খুব কাছের মানুষগুলো রাখতে পারে না আস্থা৷ সমস্ত কিছু যেন হয়ে ওঠে অগোছালো ৷ রঙিন স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রকাশ্যে কান্না৷ অথবা কতশত বাঁধা বিপত্তির মাঝে তুমি হারিয়ে যাওয়ার পথে, নিজেকে পারোনা সামলিয়ে নিতে ৷ তাহলে খুজে নেও, একবার তাকিয়ে দেখো, খুব দূরে নয়, হাজার মাইল দূরেও হবে না যেতে৷ তোমার দেশের সন্তান, তোমার ভাই, বাইশ গজে লড়াই করা দ্রুতগতির বোলার তাসকিনের পানে চেয়ে দেখো৷ সেও কেঁদেছে, হয়তো কোন চাঁদহীন রাতে ভেবেছিল নিজেকে শেষ করার কথা৷ হয়তো ভাবেনি৷ সেসব তাসকিনে ভালো জানে। এখন সেটিই শুধুই অতীত৷ তাসকিন ফিরে এসেছে, করেছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত৷ অনুপ্রেরণা নিতে পারো তুমি, দাঁড়াতে পারো ঘুরে৷ করতে পারো বিশ্ব জয়৷

১৬ এপ্রিল ২০১৯। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সেদিন আনন্দের দিন। বিশ্বকাপের দল হয়েছে ঘোষণা। তবে সমস্ত আনন্দ এক পশলা চোখের বৃষ্টিতে হারিয়ে গেছে অনেকের। বিশেষ করে তাসকিন ও তার ভক্তদের। বিষন্ন মনের বিমর্ষ তাসকিন হাজির হোম অফ ক্রিকেটে৷ বিশ্বকাপ দলে হয়নি সুযোগ৷ অনেকেই বলে ছেলেরা প্রকাশ্যে কাঁদতে জানে না৷ তবে সেদিন ব্যাকরণের সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে কেঁদেছিল তাসকিন ৷ কথা দিয়েছিল ফিরে আসবে৷ বলেছিল, সবাই তো ভালোই চায়, খারাপ চায় না কেউ। সামনে আরও সুযোগ আছে। আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাবো। সুপার লীগ (ডিপিএল) খেলবো। ভালো করে খেলার চেষ্টা করবো। সবাই দোয়া করবেন, ধন্যবাদ।

ধন্যবাদে যে ফুলস্টপ দিয়েছিল তাসকিন সেটি আজ বড় অনুপ্রেরণার প্রতীক। ক্রিকেটের খোঁজ কেউ রাখুক কিংবা না রাখুক তাসকিনকে না চিনলেও নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া নিশ্চিতভাবেই,নিশ্চই কষ্টের। জীবনে বাধা বিপত্তি আসবেই। তাই বলে থেমে থাকার ‍সুযোগ নেই। সুযোগ নেই বসে থাকার। নিজের লড়াই করতে হবে নিজেকে। ফিরতে হবে আরও যোগ্য হয়ে। তাসকিন যখন ফিরেছেন তখন মাদিবার রাষ্ট্রে সিরিজ সেরা করেছেন নিজেকে। দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে না বলেছেন আইপিএলকে। 

তাসকিন ফিরেছে। দেশের ক্রিকেটে ভালোভাবেই অবদান রাখার সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করছে। প্রত্যাবর্তনের পর সফলতার হার অনেক বেশি। ইনজুরি থেকে নিজেকে ফিট করার অদম্য চেষ্ঠা নিশ্চই মুগ্ধ করে ক্রিকেট প্রেমিদের‌।

তাসকিনের মত আরেকজন সংগ্রামী এনামুল হক বিজয়। হাতের ইনজুরিতে দল থেকে ছিটকে পড়া বিজয় ছিটকে পড়েছিল জাতীয় দল থেকেই। চেষ্ঠা, প্রচেষ্ঠার কোন কিছুর ঘাটতি ছিল না। তবুও কিছুতেই হচ্ছে না কিছুই। যখন হয়েছে তখন গড়েছে রেকর্ড। সুযোগ এসেছে জাতীয় দলে। স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন পূরণে নিজেকে উজাড় করে দিতেও প্রস্তুত এই ডানহাতি ব্যাটার। সর্বশেষ ডিপিএলে ব্যাট হাতে যে ঝলক দেখিয়েছে তাতে আলাদা করে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। প্রতিটি ইনিংস ছিল এক একটি অনুধাবণ সাথে দীর্ঘসমযের অপ্রাপ্তির যোগফল।  

আলোচনায় যোগ করা যায় আরেকটি গল্প। ওপেনার তামিম ইকবালের ভাঙ্গা হাতের লড়াইয়ের স্মৃতি। চাইলেই থাকতে পারতো বসে। শীতল রুমে নিজের জীবনের ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে পারতো অনায়াসে। তবে করেননি তেমন কিছুই। করেছেন ঠিক উল্টো। যেটি কেউ করেনি কল্পনা। সারমর্ম একটাই দেশের প্রতি ভালোবাসা। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। নিজের দায়িত্ব জীবন বাজি রেখে হলেও সম্পর্ণ করা। তামিম ভাঙ্গা হাত নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারলে সামান্য বিপর্যয়েও অনেক কিছুই করার ক্ষমতা রয়েছে প্রত্যেকের। কেউ পরাজিত সৈনিক হয়ে থাকতে চায় না। প্রিয় মানুষগুলো দেখতে পছন্দ করে না। তাই নিজেকে লড়াইয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে সব পর্যায়ে। আস্থা রাখতে হবে নিজের প্রতি।

মানুষ বলেই আবেগি আমরা। জাতি হিসেবে বাঙালি বলে আরও বেশি। এতকিছুর পরেও যখন লড়াই করার শক্তি থাকবে না মনে। পড়াশোনা, চাকরি ব্যর্থতা কিংবা প্রিয়তম অথবা প্রিয়তমা ছেড়ে যাওয়ার কষ্টে বিভোর হয়ে নিজ স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম তখন আরেকবার চোখ বুলানো যাক বাইশ গজে সংগ্রাম করাদের একজনের দিকে। ঘরের মাঠে বৈশ্বিক আসর খেলতে না পারার কষ্টে সেদিনের কান্না করা তরুণ ছেলেটি আজ বাংলার কিংবদন্তিদের একজন। নিজ এলাকার মানুষের পরম বন্ধু।  

অনুপ্রেরণা শব্দটি ছোট কিন্তু এর মাঝে লুকায়িত আত্মশক্তি। এই গল্প আপনাদের সকলেরই জানা। হয়তো হতে পারেন বিরক্ত। তবে এমন গল্পে আসবে না ক্লান্তি। নিজের আবাধ্য পায়ের চেয়েও অনেক বেশি অবাধ্য যে মানুষটা তিনি হলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। নিজ দায়িত্বে অটুট থাকায় কোন বাঁধা হতে পারেনি খুব একটা বড়। মনের শক্তি কতটা হলে লড়াইয়ে টিকে থাকা যায়, হওয়া যায় কিংবদন্তিদের একজন তা দেখিয়েছেন ম্যাশ। সামান্য কিংবা বড় কোন দুঃসময়ে হাল ছেড়ে দিতে নেই তার শিক্ষা দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক নেতা। সেই শিক্ষা হতে পারে মস্ত বড় অনুপ্রেরণা। 

দেশের অভ্যন্তরে এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যাদের জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প হয়ে উঠবে অনুপ্রেরণা। ক্রিকেটের খোঁজ রাখার সংখ্যা বেশি বলেই তাদের নিয়েই আলোচনা। যাদের গল্প আসেনি উঠে তাদের নিয়েও হবে একদিন আলোচনা। 

জীবনে বাঁধা-বিপত্তি আসবেই। এটিই স্বাভাবিক। কারন দিন শেষে বড় পরিচয় মানুষ আমরা। তাই বলে ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। ব্যক্তিগত জীবনে খুব কম সংখ্যক মানুষ প্রত্যাশা করে ।বাইশ গজের যোদ্ধাদের নিয়ে প্রত্যাশা করা মানুষদের সংখ্যা মোটেও দুই একজন নয়। সবুজ সোনালী বাংলার প্রতিটি মানুষের বড় স্বপ্ন তারা ভালো কিছু করবে। ম্যাচ শেষে বিজয়ের হাসি তাদের সহ পুরো বাংলাদেশে বিরাজ করবে। ক্রিকেট শুধু বাঙালির আবেগ নয়। অনুপ্রেরণা নেওয়ার মত অনেক কিছুই আছে। নিজ দেশের সন্তানরাও এমন অসংখ্য নজিড় সৃষ্টি করেছে যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা নেওয়া যায়।

 

-নট আউট/এমআরএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

তিন পান্ডবের পাঁচ সেঞ্চুরি, ইমপ্যাক্টে এগিয়ে.....

বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলা সাকিবের রান ১১৪৬৷ ২৯ ম্যাচে মুশফিকের ৮৭৭ রান৷ এই রান নিয়ে রয়ে...

৬, ৬, ৬, ৬, ৬—‘রিংকু সিং’ হ্যাভ ডান ইট!

শেষ ওভারে এমন খুনে ব্যাটিং এর আগে কেউ দেখেনি বোধহয়।

তাকে সময় দিন, যেন সে হারিয়ে না যায়

‘২০১৬ সালে রিজওয়ানের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেসময়ে যেহেতু তার বয়স কম ছিল, দু...