ঢাকা | শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

চাপের গ্রাফ নিম্ন হলে তৈরী হবে পঞ্চপান্ডব, অন্যথায় শুধুই আক্ষেপ!

মশিউর রহমান শাওন
প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২২ ২২:১৬

বাংলাদেশ তরুণ ক্রিকেটার। ছবি সংগৃহীত বাংলাদেশ তরুণ ক্রিকেটার। ছবি সংগৃহীত

মশিউর রহমান শাওনঃ বাংলাদেশ ক্রিকেটে তরুণদের প্রতি আলাদা একধরনের চাপ কাজ করে। ক্রিকেটের প্রতি সাধারণ মানুষের অধিক ভালোবাসা হতে পারে এর অন্যতম কারণ। দুই যুগ ধরে আন্তর্জাতিক ময়দানে লড়াই করলেও উন্নতির সবটুকুই একদিনের ক্রিকেটে। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট ও সাদা পোষাকের ক্রিকেটে উন্নতি কিছুটা হলেও ধারাবাহিকতার ছিটে ফোঁটা নেই তা বলাই চলে। সামনে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ইতমধ্যে পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তামিমের অনুপস্থিতি ও সর্বশেষ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ভড়াডুবির পর সেই পরিকল্পনার অনেকটা জায়গা নিয়ে রয়েছে তরুণ মুনিম শাহরিয়ার। দ্রুত রান তুলতে পটু হওয়ায় বোর্ড থেকে শুরু করে সাধারণ ভক্তরা স্বপ্ন দেখছেন তাকে নিয়ে। অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ সামলিয়ে মুনিম কতটা নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারবেন তার উত্তর ভবিষ্যতের জন্যই তুলে রাখা যাক।

ঘরোয়া ক্রিকেট ও সর্বশেষ বিপিএলে ওপেনিংয়ে দূর্দান্ত ব্যাটিং করা মুনিম ঘরের মাঠে ডাক পেয়েছিলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তার সামর্থ্য কিংবা মেধা নিয়ে প্রশ্ন তোলা একপ্রকার ভুল হলেও অভিষেক সিরিজে করতে পারেননি ভালো কিছু। ২ ম্যাচে রান সংখ্যা মোটে ২১। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশনেও খুব একটা ছন্দে ছিলেন না এই ব্যাটার। মুনিমের প্রতিভায় ভরসা রাখলে তা হতে পারে দেশের ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে একজন ক্রিকেটারকে শুরুটা যত দেখভাল করা হয় একবার ব্যর্থতায় পড়েলে কমে যায় অনেকটাই সহযোগিতা।  দেশের জন্য মাঠে লড়াই করাদের কেউ ইনজুরিতে পড়লে চিকিৎসার জন্য বিসিবি যেমন সর্বোচ্চ করেন তেমনি ব্যর্থতার সময় উচিত পাশে থাকা, সাহস দেওয়া। 

আসন্ন উইন্ডিজ সিরিজে মুনিম কতটুকু ভালো করবে তার বিশ্লেষণ সেই সময়ের জন্য তুলে রাখা যাক। সঠিক পরিচর্চার চাদরে আবৃত করলে মুনিম হতে পারে যোগ্য ওপেনার। কুড়ি ওভারের মারকুটে ফরম্যাটে মুনিম যে একজন মারকুটে ব্যাটার। দেশকে দীর্ঘসময় দিতে পারবে সার্ভিস। দলের জয়ে রাখতে পারবে অবদান। এই খেলোয়াড়দের দ্বারা বিজয়ের কেতন উড়ানো দেখতে চাইলে কমাতে হবে প্রত্যাশা, হরহামেশাই করা অগঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে বন্ধ। 

সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ১১৫ ম্যাচে রানসংখ্যা ২০০২। গড় ২৩ এর সামান্য বেশি। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ রান ৬৪। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে একমাত্র বাংলাদেশি তামিম ইকবাল যার ঝুলিতে রয়েছে শতক। অন্যকোন ব্যাটার করতে পারেনি এমন কোন কীর্তি। মুনিম কিংবা মুনিমের মতই যারা আসবে বড়দের মঞ্চে তারা দুই তিন সিরিজ পৃথিবী জয় করবে কিংবা সামর্থ্য আছে বলেই প্রতিনিয়ত শতক হাকাবে এমন ভাবা মানেই কিছুটা বোকার রাজ্যে বসবাস করা। তামিম ব্যতীত অন্যকেউ শতক হাকাতে পারেনি বলে নতুনদের অনেক সময় লাগবে এমন ভাবাও ঠিক হবে না। সবকিছু গুছিয়ে নিতে তাদের দিতে হবে দীর্ঘসময়। আস্থার সর্বোচ্চ দিতে তারাও যেন সমালোচনাহীন মুক্ত আকাশ পায় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে সাধারণ মানুষদের।  

মুনিমকে একটু আড়াল করে আলোচনায় যোগ করা যায় ফিনিশারের স্বপ্ন দেখানো শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে। যুব দল থেকে শুরু করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্রুত রান তোলার কল্যাণে নির্বাচকদের নজড়ে আসেন শামীম। তার অভিজ্ঞতা কিংবা বয়স নয় সকলে ভরসা করেছিল তার প্রতিভায়। ১০ ম্যাচের ৯ ইনিংসে করেছেন মাত্র ১২৪ রান। নামের সাথে রানের সংখ্যা না মিললেও তাকে দোষ দেওয়ার সুযোগ খুব একটা নেই। বড়দের মঞ্চে সেই প্রতিভার ষোলআনা প্রকাশে ব্যর্থ হওয়ায় তার প্রতি এখন কতটুকু আস্থা নির্বাচক থেকে শুরু করে স্বল্পতে বড় স্বপ্ন দেখা মানুষদের তা আলাদা করে লেখার হয়তো প্রয়োজন নেই। তাকে ঘিরে যে প্রত্যাশার চাপ ছিল সেটিই অনভিজ্ঞ শামীমের বাদ পড়ার মূখ্য কারণ তা ক্রিকেটের জ্ঞাণ রাখা সকলের কাছেই পরিস্কার। বাদ পড়া মানেই সব শেষ নয়। নিজেকে গুছিয়ে শামীম জাতীয় দলে ফিরতে পারবে কি না সেটা নিশ্চিত করতে হবে শামীমকেই।

একদিনের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনার দড়জা অনেকটাই বন্ধ হওয়ায় কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের পর আলোচনায় আসা যাক সাদা পোষাকে। তামিমের সাথে ওপেনিংয়ে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখিয়েছিল সাদমান ইসলাম। টেস্ট ক্রিকেটে পুরো দল যেখানে ব্যর্থ সেখানে ব্যর্থতার দ্বায় অনেকটাই পড়েছিল সাদমানের উপর। কারন খুব বেশি ইনিংসে দলকে দিতে পারেননি ভালো কিছু। শুরুতেই ছন্দপতন বাদ পড়ার কারনের মধ্যে একটি। তরুণ বলেই হয়তো বাকিদের ব্যর্থতা নিতে হয়েছে নিজ কাঁধে। 

সাদা পোষাকে নতুন করে আরেকজন দিচ্ছেন ভালো কিছুর আভাস। যেমন দিয়েছিলেন সাদমান, সাইফরা। তামিমের সাথে বেঁধেছে জুটি। ৬ টেস্টের ১০ ইনিংসে প্রায় ৩০ গড়ে করেছে ২৯৮ রান। একশতকের সাথে রয়েছে ২ অর্ধশতক। দেশের ক্রিকেটের খোঁজ রাখা মানুষদের কাছে অজানা নয় এই ডানহাতি ব্যাটার। তবুও সবার প্রয়োজনে মনে করিয়ে দিলে ক্ষতি হবে না খুব একটা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শতক হাকানো সেই তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম পাঁচ হাজার রান করা মুশফিকুর রহিম খেলেছেন ১৫১ ইনিংস। তামিমের বেলায় সংখ্যাটি ১২৮। মুশফিক শূণ্য রানে আউট হয়েছে ১২ বার, তামিম ১১ বার। আরেকবার ছোট করে বলাই যায় একদিনে তৈরী হয়নি তামিম-মুশফিকরা। জয়কে সেই পর্যায়ে দেখতে হলে দিতে হবে সময়। কারন পরিপক্ক করে আনা হয়নি বড়দের মঞ্চে। 

ক্রিকেটারদের পরীক্ষা নিরিক্ষা করা ম্যানেজম্যান্টের জন্য অন্যায়ের কিছু নয়। একজন খেলোয়াড়কে নিরিক্ষা করতে হবে সেই ফরম্যাটে, যে ফরম্যাটের যোগ্য সে। সাইফ সাদা পোষাকের ব্যাটার হলেও তাকে সুযোগ দেওয়া হয় টি-টুয়েন্টিতে। ফলে ব্যর্থ হয় স্বাভাবিকভাবেই। নাইম শেখের প্রতিভা দারুণ। সে দ্রুত রান তুলতে না পারলেও দলের বিপর্যয়ে কিংবা প্রয়োজনে ব্যাটিং করতে পারে দীর্ঘসময়। তাকে সাদা পোষাকের ক্রিকেটে চিন্তা করলে খুব একটা ভুল হওয়ার কথা নয়। 

বাংলাদেশ ক্রিকেটে চিরপরিচিত কথা বিকল্প নেই পঞ্চপান্ডবদের। বিকল্প তৈরীর চেষ্ঠা কতবার হয়েছে তাই বড় প্রশ্ন। ব্যর্থতার বেড়াজালে পঞ্চপান্ডবরা যতটা সহযোগিতা পেয়েছে তার কতভাগ বর্তমান তরুণরা পায় সেটির দিকে দিতে হবে নজড়। আইপিএল থেকে কতটা লাভবান হয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, অপরদিকে প্রতিবেশী হয়ে আমরা কতটা ফায়দা নিতে পারি নিজেদের আয়োজিত লিগ থেকে সে হিসেব করতে হবে ঠান্ডা মাথায়। 

বাংলাদেশে তামিম-সাকিবদের বিকল্প বের না হওয়ার অন্যতম কারনগুলোর মধ্যে একটি, প্রায় সব দেশ তাদের খেলোয়াড়দের ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিজ্ঞ করে সুযোগ দেয় জাতীয় দলে। আমাদের দেশের বেলাতে এমন চিত্র পুরোটাই উল্টো। জাতীয় দলে অভিজ্ঞ করার মিশনে পাঠানো হয় তরুণদের। ফলে চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে হারিয়ে যেতে হয় মাঠের লড়াই থেকে। ফলে বাড়বে আক্ষেপ পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে হতাশা। 

 

-নট আউট/এমআরএস

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

তিন পান্ডবের পাঁচ সেঞ্চুরি, ইমপ্যাক্টে এগিয়ে.....

বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলা সাকিবের রান ১১৪৬৷ ২৯ ম্যাচে মুশফিকের ৮৭৭ রান৷ এই রান নিয়ে রয়ে...

৬, ৬, ৬, ৬, ৬—‘রিংকু সিং’ হ্যাভ ডান ইট!

শেষ ওভারে এমন খুনে ব্যাটিং এর আগে কেউ দেখেনি বোধহয়।

তাকে সময় দিন, যেন সে হারিয়ে না যায়

‘২০১৬ সালে রিজওয়ানের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেসময়ে যেহেতু তার বয়স কম ছিল, দু...