ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীরাম-সাকিবের সেরা বিশ্বকাপ ও বোকা বাঙালি

নট আউট ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২২ ২১:৫১

ছবিঃ ফাইল ফটো। ছবিঃ ফাইল ফটো।

স্পেশাল করেসপন্ডেন্টঃ সেরা বিশ্বকাপ, সেরা বিশ্বকাপ। এমন একটা প্ল্যাকার্ড বুকে সাঁটিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। তথ্যগত ও অর্জনের ভিত্তিতে এখানে কোনো ভুল নেই।

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, এবার এমন কিছু হবে যা অতীতে কখনো হয়নি। ভারতীয় টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম বিশ্বকাপ শেষে জোর গলায় বলে গেছেন, বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। নির্জলা সত্য এটাই যে, আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল আসর এবারই খেলেছে বাংলাদেশ দল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সুপার টুয়েলভ পর্বে দুটি জয় পেয়েছে টাইগাররা। হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়েকে। তাই সেরা বিশ্বকাপের এই প্ল্যাকার্ডেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।

ক্রিকেটে অন্তঃপ্রাণ বাঙালিকে বুঝ মানাতে, ভুলিয়ে রাখতে এই অস্ত্রটা ভালোভাবে ব্যবহার করেছেন সাকিব ও শ্রীরামরা। সেখানে বিসিবিও দন্ত বিকশিত হাসি নিয়ে তাদের সঙ্গে সহমত জানিয়েছে। আড়ালের সত্যটা বিসিবির কর্তাদের কাছেও গোপন নয়।

২০০৭ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের দল। তারপর পর টানা ছয় আসরে মূল পর্বে কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের। ১৫ বছরের বন্ধ্যাত্ব ঘুচে গেছে এবার অস্ট্রেলিয়ায়। সাকিব বাহিনীও সরাসরি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ তথা মূল পর্বে খেলেছে।

কিন্তু জয়গুলো এসেছে দুটি দুর্বল দেশের বিপক্ষে। নেদারল্যান্ডস আইসিসি সহযোগী দেশ, জিম্বাবুয়েও ক্রিকেটের মানচিত্রে এখন বাংলাদেশের চেয়ে তলানীতেই মূল্যায়িত হয়। এই দুটি দেশকে হারালেও বড় দলের বিপক্ষে জয় না পাওয়ার হাহাকার কিন্তু আগের মতোই অটুট আছে। ডাচরাই যেমন দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে, জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে, বাংলাদেশ তেমন কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট বলতে অজ্ঞান, ক্রিকেট দেশের আবেগ-ভালোবাসা। সেটা সাকিবের অজানা নয়। ক্রিকেট ছেড়ে ব্যবসা, এমনকি রাজনীতিতেও নাম লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তার চতুরতা নিয়ে কারো সংশয় নেই। তাই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের সেরা বিশ্বকাপের গান শুনিয়েছেন অধিনায়ক। যেখানে কারোই দ্বিমত করার কারণ নেই। কিন্তু বড় দলগুলোর বিপক্ষে অতীতের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা যে এখনো অব্যাহত আছে, সে বিষয়ে কর্নপাত করেননি তিনি। বোকা বাঙালিকে শান্ত রাখার খুব সহজ চেষ্টায় সফল হয়েছেন সাকিব।

শ্রীরামের ইমপ্যাক্ট, ইনটেন্ট থেকে কি পাওয়া গেল?
গত আগস্টে হুট করেই শ্রীরামকে জাতীয় দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট করা হয়। টি-২০ দলের ম্যানেজমেন্ট থেকে সরিয়ে দেয়া হয় রাসেল ডমিঙ্গোকে। সীমান্তের ওপাড় থেকে আসা শ্রীরাম বাংলাদেশের খেলায় নতুনত্ব আনার কথা বলেছেন। ইমপ্যাক্ট, ইনটেন্টের তত্ত্ব শুনিয়েছেন।

সৌম্য সরকারের হুট করে মারতে গিয়ে আউট হয়ে যাওয়াকে শ্রীরাম বলেছেন ইনটেন্ট। বাস্তবতা হচ্ছে, এটা শ্রীরামের বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে অজ্ঞতা যে, সৌম্য ক্যারিয়ার জুড়েই এমনটা করে এসেছেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে এটাই তার সহজাত ব্যাটিং। তাই শ্রীরামের ইনটেন্ট সৌম্যর মাঝে বহু বছর আগে থেকেই ছিল। এবং এমন ম্যাচের পর ম্যাচ এমন বাজে চেষ্টা ও ব্যর্থতার কারণেই এই বাঁহাতি দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যানের এই রুপটার সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত বাংলাদেশের ক্রিকেট। যেটা অজানা ছিল শ্রীরামের। শুধু সৌম্য নয় ইনটেন্টের ধারণা অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সবসময় এগিয়ে। কারণ মারতে গিয়েই বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান আউট হন।

দৈনিক মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দিয়ে শ্রীরাম আসলে বাংলাদেশকে কি দিয়েছেন? নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জয়। এটা হলফ করে বলা যায়, বংলাদেশের ক্রিকেট এখন যে পর্যায়ে আছে, তাতে করে যে কোনো কন্ডিশনে এই দুটি দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ দল। এবং সেটা হয়তো কোচ ড্রেসিংরুমে না থাকলেও সম্ভব। বিদেশি কোচ ছাড়া দেশের দ্বিতীয় সারির কোনো কোচকে নিয়েও এ দুটি জয় টাইগারদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। পরীক্ষিত-বিখ্যাত কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিনরা নয় মিজানুর রহমান বাবুল, সোহেল ইসলামের মতো বিসিবির কোচদের নিয়েই এই টুকু সাফল্য স্বাভাবিক ঘটনা ছিল।

কিন্তু বোকা বাঙালিকে ‘টিনের চশমা’ পরিয়ে শ্রীরাম এই দুটি জয়কে সেরা বিশ্বকাপের প্ল্যাকার্ড ধরিয়ে দিয়ে গেলেন। আর ইমপ্যাক্ট মানে কম বলে বেশি রান, ভালো স্ট্রাইক রেট। তেমন ইনিংস বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের খেলতে দেখা যায়নি বললে ভুল হবে না। লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত ছাড়া কারো ব্যাটিংয়েই ইমপ্যাক্ট তত্ত্বটা কার্যকর দেখা যায়নি।  

 

নট আউট/এমজেএ/ডব্লিউআর।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

প্রথম ওয়ানডেতে হোঁচট খেল বিসিবি একাদশ

ভারতের এমএ চিরাম্বরম স্টেডিয়ামে সোমবার প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছিল তামিলনাড়ু ক্রিক...

ভারত সিরিজের দল ঘোষণা বাংলাদেশের

জিম্বাবুয়ে সফরের দল থেকে বাদ পড়েছেন মোসাদ্দেক সৈকত, শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম।

জয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ

৭৪ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানের টার্গেটেই কঠিন বানিয়ে ফেলে ভারত।